আরেক রকম ● দশম বর্ষ দ্বাবিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ নভেম্বর, ২০২২ ● ১-১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

রাজনীতির দুর্বিপাকে বিপর্যয়ের মুখে সেতু সুরক্ষা

পার্থপ্রতিম বিশ্বাস


এদেশের পরিবহন পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে 'ঝুলন্ত সেতু' অতি পরিচিত সেতু কাঠামো। এমন সেতু কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী - দেশের বহু অংশেই রয়েছে আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বাঙালীর জীবনে ‘রাম ঝুলা’ কিংবা ‘লক্ষ্মণ ঝুলা’ এক অতি পরিচিত নাম। হরিদ্বার পেরিয়ে হৃষীকেশের কাছে খরস্রোতা গঙ্গা পেরোনো ঝুলন্ত ইস্পাতের তারের সেতু আট থেকে আশি বাঙালির স্মৃতিতে আজও অমলিন। শতাব্দী প্রাচীন এমন সেতুগুলি সেকালে উন্নত প্রযুক্তির নিরাপদ পরিবহন কাঠামো হিসাবে বিবেচিত হলেও হাল আমলে এমন সেতুর প্রয়োগ কমে এসেছে। ফলে প্রাচীন সেই ঝুলন্ত পথ চলার সেতুগুলির সমান্তরাল উন্নত প্রযুক্তির কংক্রিট কিংবা ইস্পাতের সেতু দিয়েই নদী পেরনোর পথ তৈরি হচ্ছে। এমন ঝুলন্ত সেতুর সিংহভাগই ছিল মানুষের পায়ে চলার সেতু। সেই সেতু সাধারণভাবে যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয় তার ভারবহন ক্ষমতা কম বলেই। তাই আধুনিক সেতু নির্মাণে ঝুলন্ত সেতুর অস্তিত্ব বহাল থাকলেও সেগুলির নির্মাণ প্রযুক্তি এবং সামগ্রী পুরানো সেতুর তুলনায় অনেকাংশেই ভিন্ন এবং গুণগতভাবে উন্নত। শতাব্দী প্রাচীন এমন সেতুগুলি বয়সের ভারে জীর্ণ হয় বলেই সেগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। হাল আমলে কেবলমাত্র পায়ে চলার সেতু হিসাবে ‘ফুট ব্রিজ’ রাস্তা কিংবা রেল লাইন পারাপারে ব্যবহৃত হলেও নদী বা জলপথ পারাপারে এমন সেতুর ব্যবহার খুবই কম। বিকল্প হিসাবে নদীর ওপর স্থায়ী কাঠামোর সেতুতে যান চলাচলের পাশাপাশি পথচারীদের জন্য ফুটপাথের ব্যবস্থা রয়েছে।

সেতু বিপর্যয়ের দুঃস্বপ্নে কয়েক বছর ধরে বাঙালীর দিন কেটেছিল পোস্তা থেকে মাঝেরহাট পর্বে। এবার বিপর্যয় দেশের পূর্ব প্রান্তে বাংলায় নয় ঘটেছে একেবারে পশ্চিম প্রান্তের গুজরাতে ‘মোরবি’ সেতুতে। এই ভয়াবহ সেতু বিপর্যয়ে ইতিমধ্যে নিহত হয়েছে দেড়শোর কাছাকাছি মানুষ, আহত বহু। এই সেতুটিও ছিল ইংরেজ আমলে তৈরি স্থানীয় মহারাজার বিশেষ যত্নে গড়া শখের ঝুলন্ত সেতু, যে ‘ঝুলতা পুল’ আজও সেই অঞ্চলে বিশেষ দ্রষ্টব্যের উপাদান বলে দাবি করে গুজরাট রাজ্য পর্যটন সংস্থা। সেতুটি লম্বায় প্রায় সাড়ে সাতশো ফুট আর চওড়ায় প্রায় চার ফুট, যেটি মাচ্ছু নদীর দু'পারের দরবারগড় প্রাসাদ এবং নজরবাগ প্রাসাদের সংযোগকারী পথ ছিল। এমন সেতুটিকে আজও ‘মোরবি’ শহরের বিশেষ পরিচিতির স্মারক হিসাবে গন্য করা হয়! বলাই বাহুল্য পাশাপাশি দুটো লোক নিরাপদে চলাচলের এমন সেতু দলে দলে মানুষের মিছিল করে যাওয়ার পথ নয়। এমন সেতু নির্মাণের সময় সেটির ধারণ ক্ষমতা ছিল একসাথে পনেরো জন মানুষের। কালে কালে উপর্যুপরি মেরামতির পর সেটির ধারণ ক্ষমতা নির্ধারিত হয়েছিল একশোর কিছু বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সেতু বিপর্যয়ের দিন শয়ে শয়ে মানুষ যাবতীয় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সেতুতে চড়ে যে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলো সেটি ওই সেতু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের কাণ্ডজ্ঞান নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।

বয়সের ভারে শতাব্দী প্রাচীন সেতুটিকে মেরামতির জন্য কয়েক মাস বন্ধ রাখার পর সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়েছিল সাধারণের ব্যবহারের জন্য। আর সেতু চালু করার চার দিনের মাথায় সেতু ভেঙে পড়ার ভয়াবহ দুর্ঘটনা বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এমন বিপর্যয়ের কার্য-কারণ সম্পর্কে। প্রথমত যে সেতু মেরামতির জন্য ছ' মাস বন্ধ রাখা হয়েছিল সেই সেতু খুলে দেওয়ার আগে তার মেরামতি যথার্থ হয়েছিল কিনা সেটা যাচাই করা ছিল বাধ্যতামূলক। কারণ মেরামতি সম্পন্ন হওয়ার পর সেতুর নিরাপত্তার শংসাপত্র বা ফিটনেস সার্টিফিকেটের ছাড়পত্র মিললেই সেই সেতু কাঠামোর নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এমন ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার পরই কেবল সেতু খুলে দেওয়া হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন সার্টিফিকেট ছাড়াই এই সেতু সাধারণের চলাচলের জন্য যেভাবে খুলে দিয়েছিলো সেই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থা তাতে স্থানীয় প্রশাসনের দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং সক্ষমতা আজ গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

শহরের ঘড়ির ব্যবসায়ে হাত পাকানো সংস্থাকে এমন ঝুলন্ত জীর্ণ সেতুর মেরামত কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের ভার দিয়েছিলো যে প্রশাসন আজ তাঁদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে বৈকি। ফলে এমন সংস্থার সাথে স্থানীয় প্রশাসনের অশুভ আঁতাতের অভিযোগ এলে সেটা খণ্ডন করা যথেষ্ট মুশকিল। তা না হলে, আগামী পনেরো বছরের জন্য যে বাণিজ্যিক সংস্থার সাথে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি করেছে স্থানীয় পুর প্রশাসন, তাদের নাকের ডগায় আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এক বেসরকারি সংস্থা এমন সর্বনাশা সিদ্ধান্ত নেয় কোন সাহসে? নির্মাণকারী সংস্থার এমন দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসের যোগানদার কে বা কারা সেটি অবিলম্বে খুঁজে বের করা প্রয়োজন এই বিপর্যয়ের ময়না তদন্তের জন্য। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ যে, নির্মাণের ধার্য সময়সীমার অনেক আগেই সেই মেরামতি তাড়াহুড়ো করে যেভাবে শেষ করা হয়েছিলো তখন কি স্থানীয় পুরসভার থেকে সেই কাজের ওপর কোন নজরদারির ব্যবস্থাই ছিল না?

গুজরাতের এই ‘মোরবি’ সেতু কার্যত এক ধরনের টোল ব্রিজ। যার মানে হল এই সেতু ব্যবহারকারীদের থেকে নির্ধারিত হারে টিকিট বিক্রি করে সেই সংস্থা আগামী পনেরো বছর সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং তার লাভ করবে সেই অর্থ থেকেই। এমন চালু টোল ব্রিজে তার ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী সেতুর ওপর দিয়ে পথচারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার কথা। কিন্তু দুর্ঘটনার দিন বাড়তি রাজস্ব আদায়ের ঝোঁকে এই উৎসবের দিনগুলিতে সেতুর ধারণক্ষমতাকে ছাপিয়ে লোক ঢোকানো হয়েছিল কিনা সেই প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। আর এখানেই সেই প্রশ্ন জোরালো হয় যে, সেই রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে উৎসবের দিনগুলিতে মনমোহিনী রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসাবে স্থানীয় পুরসভা এমন জেগে ঘুমানোর কৌশল গ্রহণ করেছিল কিনা? ফলে দুর্ঘটনার পর দেশের রাজনীতির নিয়ম মেনে সেই বিপর্যয়ের দায় নির্মাণকারী সংস্থার ঘাড়ে চাপাতে উদ্যত হয়েছে সে রাজ্যের শাসক। কিন্তু আজ একথা ভুললে চলবে না যে সাধারণ মানুষ তাঁর নিরাপদ নাগরিক পরিসেবা কিংবা পরিকাঠামো গড়ার জন্য নির্বাচিত করে দেশ কিংবা রাজ্যের সরকার, অথবা পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের প্রশাসনকে। সরকার কিংবা পুরসভা পরিকাঠামো গড়া কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োগ করে বিভিন্ন বানিজ্যিক সংস্থাকে। ফলে এমন পরিকাঠামোর বিপর্যয় ঘটার পর কেবল বেসরকারি বানিজ্যিক সংস্থার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পেতে পারে না প্রশাসন। আমাদের রাজ্যেও মালবাজারে বিসর্জনের সময় ‘মাল’ নদীতে হড়পা বানে মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের। অভিযোগ উঠেছিলো যে নদীর বুকে জলের গতি রোধ করে অস্থায়ী বাঁধ গড়ে বিসর্জনের পরিকাঠামো যথেষ্ট ঝুঁকিবহুল হওয়া সত্ত্বেও এমন অনুমতি কেন দিয়েছিলো স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পুরসভা? ফলে দুটি ক্ষেত্রেই এক যুক্তি প্রযোজ্য উৎসবে ভিড়ের সময়ে জনজীবনের নিরাপদ পরিকাঠামো সুনিশ্চিত করার দায় একান্তই স্থানীয় প্রশাসনের। এই যুক্তি পশ্চিমবঙ্গের মালবাজারে যতোখানি সত্যি ঠিক ততোটাই সত্যি গুজরাতের ‘ মোরবি’তে।

আমাদের রাজ্যে সেতু বিপর্যয়ের পর দায় ঠেলাঠেলির খেলা দেখে অভ্যস্ত মানুষ ‘মোরবি’ দুর্ঘটনা নিয়েও দুই রাজ্যের দুই শাসকের নিম্নমানের রাজনীতির তরজা দেখল। কলকাতার মাঝেরহাটের সেতু বিপর্যয়ের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সটান তার দায় কেন্দ্রের সংস্থা রেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। কারন মাঝেরহাট সেতুর পাশ দিয়ে মেট্রো রেলের কাজ চলছিলো। ফলে রাজনীতির সহজ পাটিগণিতে পূর্ত দপ্তরের অবহেলায় দিনে দুপুরে ভেঙে পড়া সেতুর দায় রেলের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছিল রাজ্যের সরকার। কিন্তু শেষমেশ তাতে মুখ রক্ষা হয়নি সরকারের। একইভাবে পোস্তায় সেতু বিপর্যয়ের পর দেশের প্রধানমন্ত্রী তীব্র শ্লেষের সাথে যথার্থই বলেছিলেন এমন সেতু দুর্ঘটনা ‘Act of God ‘ নয় ‘Act of fraud ‘। ফলে এমন ঠগেদের সরকার রাজ্যে থাকলে এমন বিপর্যয় ঘটবেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল দেশের সেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গুজরাটে এমন ভয়াবহ সেতু বিপর্যয়ের পর সেই রাজ্যের ঠগেদের নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করলেন না। এমনকি সেই দুর্ঘটনায় প্রায় পঞ্চাশের ওপর শিশু, আর দেড়শোর কাছাকাছি মানুষের মৃত্যুর শোকের আয়ু শোকানোর আগেই তিনি কনভয় হাঁকিয়ে রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী প্রচার সেরেছেন। ফলে এদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দায়িত্বহীন সরকার পরিচালনার যে দৃষ্টান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাসক গড়ে তুলেছে বছরের পর বছর, ঠিক সেই পথেই চলেছে বিরোধীদের সিংহভাগ। বিপর্যয় চলাকালীন ক'টা দিন রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরে আবার সব কিছু যেমন ছিল তেমন। ফলে দেশজুড়ে পড়ে থাকা হাজার হাজার জীর্ণ সেতুর সংস্কার এবং সেগুলির নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোন পরিকল্পিত উদ্যোগ চোখে পড়ে না। নজরে আসে না রাজ্যে রাজ্যে ফি বছর পাশ হওয়া বাজেটে সেতু সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ। জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে খেলা, মেলা, উৎসবে যেভাবে খোলামকুচির মতো টাকা ওড়ে তার অগ্রাধিকারের ভগ্নাংশও আসে না সেতু সুরক্ষা কিংবা নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে। ফলে ঝুঁকিবহুল পরিকাঠামোকে সঙ্গী করেই কাটে সাধারণ মানুষের দিন থেকে মাস, বছর। এরাজ্যে শুধু ঝুলন্ত সেতুই নয় বরং নদীবহুল এই রাজ্যে অগুনতি সাঁকো রয়েছে খাল, বিল নদী পারাপারের জন্য। তেমন সাঁকোগুলির সিংহভাগ কিন্তু জীর্ণ এবং ঝুঁকিবহুল অবস্থায় রয়েছে। এমন অসংখ্য সাঁকো রাজ্যের গ্রাম বাংলায় আজও পরিবহনের জরুরি পরিকাঠামো কিন্তু সরকারি পরিচর্যার বাইরে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করতে হয় প্রতিদিন। ফলে আজ গুজরাতের ঝুলন্ত সেতু বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে রাজ্যজুড়ে সাঁকোগুলির কাঙ্খিত সুরক্ষার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।

এই ঝুলন্ত সেতুগুলির ভারবাহী অংশ হল সেতুতে ব্যবহৃত ধনুকের মতো দেখতে ইস্পাতের মুল ’কেবল’, ‘কেবলের’ সাথে কিছু দূরত্ব অন্তর জুড়ে দেওয়া লাঠির মতো ভারবাহী দণ্ড আর শেষমেশ গোটা সেতুর ভারবাহী নদীর দু'পাশে ইস্পাতের কিংবা কংক্রিটের স্তম্ভ। এই ভারবাহী অংশগুলির কোন একটার বিপত্তি ঘটলেই গোটা সেতু-ভারসাম্যের সমূহ বিপদ। আমাদের চারপাশের সাধারণ কংক্রিট কিংবা ইস্পাতের রেল কিংবা সড়ক সেতুর ভারসাম্য আংশিক বিঘ্নিত হলেও গোটা সেতুটি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে না কিন্তু ঝুলন্ত সেতুর ক্ষেত্রে আংশিক নয় সার্বিক বিপর্যয় ঘটে। উপরন্তু সেই ঝুলন্ত সেতু যদি ঝড়ে কিংবা ভুমিকম্পে আড়াআড়ি দুলতে থাকে তখন তার ভারসাম্য বিঘ্নের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষিতে মোরবি সেতুর সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের ছবিতে দেখা গেছে ধারণ ক্ষমতা ছাপিয়ে প্রচুর লোক সেতুতে উঠেছে শুধু তাই নয়, বহু মানুষ সেতুর মাঝ বরাবর পৌঁছে সেতুটিকে গায়ের জোরে দোলানোর চেষ্টা করছে এবং সেতুটি ওই বিপুল ভার নিয়ে দুলতে শুরু করেছিল যেটাও ঐ সেতু বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। আমাদের রাজ্য রাজনীতিতে ‘ম্যান মেড ডিজাসটার’ শব্দটি বহুল প্রচারিত। কিন্তু এমন শব্দবন্ধের জীবন্ত উদাহরণ হয়ে রইলো ‘মোরবি’ সেতু বিপর্যয়।

এখানে আরও প্রশ্ন তৈরি হয় যে, পর পর টানা উৎসবের দিনগুলিতে সেতুর ওপর একবারে এত মানুষ উঠলে সেতু না ছিঁড়ে পড়লেও সেই সেতুতে পদপিষ্ট হয়েও বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারতো। এমন ফুট ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ে বহু মানুষের মৃত্যু সাম্প্রতিক অতীতে মুম্বাই শহরেই ঘটেছে। ফলে নবনির্মিত সেতুতে উৎসবের সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের যে স্বাভাবিক দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের কর্তব্যে পড়ে সেটাতেও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ স্থানীয় প্রশাসন। কার্যত পুলিশ, পুরসভা এবং নির্মাণকারী সংস্থার মধ্যে ন্যুনতম কোন সমন্বয় ছিল না সেই উৎসবের দিনগুলিতে। এই প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য যে, কলকাতায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প চলাকালীন উপর্যুপরি বিপর্যয়গুলোতেই পুরসভা এবং মেট্রো রেল এবং নির্মাণকারী সংস্থার মধ্যেও উপযুক্ত সমন্বয়ের অভাব দেখা গিয়েছিলো ফলে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে বৌবাজার অঞ্চলের বহু মানুষজনকেই। তাই যেকোনো পরিকাঠামো নির্মাণ কিংবা মেরামতির সময় জনস্বার্থের কথা ভেবেই বিপর্যয় মোকাবিলার কিছু পূর্ব প্রস্তুতি নিতেই হবে মানুষের প্রাণ এবং সম্পত্তি রক্ষার তাগিদেই। বিপর্যয় ঘটে যাওয়ার পর যে প্রশাসনিক তৎপরতা ‘মোরবি'তে দেখা গেলো তার সিকি ভাগও যদি বিপর্যয় পূর্ব কালে দেখা যেতো তাহলে হয়তো ঐ শতাধিক মানুষকে অকালে প্রাণ হারাতে হতো না।