আরেক রকম ● দশম বর্ষ একবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ নভেম্বর, ২০২২ ● ১৬-৩০ কার্তিক, ১৪২৯

প্রবন্ধ

ঘরে ফেরা হয়নি যে মেয়েদের

মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়


মেয়েরা সবাই গেল কোথায়? সে কবেকার কথা।
গেল কোথায় মেয়েরা? সবাই গেছে বর খুঁজতে।
আহ, কবে ওরা শিখবে?
ওদের বরেরা গেল কোথায়? সে কবেকার কথা।
ওদের বরেরা গেল কোথায়? কত আগের কথা।
সবাই গেছে যুদ্ধে। আহ, কবে ওরা শিখবে?

- ম্যাককার্থি যুগে ১৯৫৫ সালে পিট সিগার যুদ্ধের বিরুদ্ধে গেয়েছিলেন - 'মেয়েরা সব বিয়ে করেছে, আর ছেলেরা গেছে সেনাবাহিনীতে'।

পিট সিগারকে বলছি,

সেই মেয়েরা হারিয়ে যায়নি। হতাশ হবেন না বন্ধু, তারা শুধুমাত্র বিয়ে করে ঘরকন্না করছে না। আর ছেলেরাও সকলে বন্দুকবাজ নয়, তারাও অনেকে মেয়েদের হাত সযত্নে ধরেছে, সাহায্য করছে পাশে সমানে সমানে দাঁড়াতে।

দৃষ্টিটাকে আরও গভীর ও দূরপ্রসারী করতে হবে। হয়তো তাকাতে হবে, অন্য কোনওখানে - যেখানে তাকানোর কথা মনে থাকে না আমাদের। অনেক দিন ধরে তাদের যে নিশ্চুপে বাতিলের খাতায় ধরে নিয়েছি আমরা। একবার ঘুরে তাকান আজকের পৃথিবীর তথাকথিত পিছিয়ে পরা দেশের মেয়েদের দিকে! ইরানি মেয়েদের দিকে, তাদের আজাদীর লড়াইয়ের দিকে। তথাকথিত প্রগতিশীল সমাজ দূরে সরিয়ে রেখেছে যে নারীদের; যে নারীদের ক্ষমতার ওপরে আস্থা নেই উন্নত, বিকশিত মুক্তচিন্তক মানুষের; তারা আবার ফিরে আসার কথা না ভেবে মিছিলে যাচ্ছেন। আক্ষরিক অর্থে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে রাস্তায় পা দিচ্ছেন। সর্বসমক্ষে মাথার ঘোমটা খুলে আলুলায়িত কেশ ছিন্ন করে আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছেন নিশান। রূপসীর চুলের বিন্যাসে তৈরি হয় পতাকা। দাঁতে দাঁত চেপে তারা লড়াই করে যাচ্ছেন পুরুষদের হাত ধরে। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে!

ভাবছেন শুধুমাত্র নিজের মাথা নিজে ঢাকবার অথবা না ঢাকবার অধিকারের জন্য এই লড়াই? ভুল ভাবছেন; এই লড়াই স্বাধীনতার লড়াই। আজাদীর লড়াই। ইরানের নারী, ইরানের পুরুষ, ইরানের সমাজ মাঙ্গে আজাদী।

শুরুটা হয়েছিল ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাসা আমিনি জেনির মৃত্যুর পর থেকে। ২২ বছর-বয়সী আমিনি ছিলেন একজন কুর্দি মুসলিম। নিজের রাজ্য কুর্দিস্তান থেকে তেহরান শহরে ভাইয়ের সঙ্গে এসেছিলেন, মাথায় ছিল আলগা করে বাঁধা হিজাব, তার কয়েক গোছা চুল দেখা যাচ্ছিল। আমিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ সে হিজাব ঠিকমত পরেনি, সেই অপরাধে ১৩ই সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রত্যেক্ষদর্শীদের বয়ান অনুসারে পুলিশের ভয়ঙ্কর অত্যাচারে তিন দিন পরে আমিনির মৃত্যু হয়।

শাসকের প্রতিক্রিয়া

এই মৃত্যুতে ইরানের শাসকগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া আমাদের পরিচিত। প্রথমত, কর্তৃপক্ষ যা ঘটেছিল সে সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তারা দাবী করে যে আমিনি স্বাস্থ্যের কারণে হার্ট আটক হয়ে মারা গেছে। যদিও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, এই অপরাধে পুলিশ যখন তাকে পরিবারের কাছ থেকে নিয়ে যায় তখন সে সুস্থ ছিল। তাকে বারবার অফিসাররা মারধর করেছে। ফাঁস হওয়া মেডিকেল রিপোর্ট দেখিয়েছে যে, পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন আমিনির মাথায় বেশ কয়েকটি প্রচণ্ড আঘাত লেগেছিল। এমনকি দাফনের সময়েও তার বাবাকে আমিনির পা ছাড়া আর কিছুই দেখতে দেওয়া হয়নি।

আমিনির পরিবার, তার বাবা এই রিপোর্ট, রাষ্ট্রের এই অবস্থান প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। শুনুন আমিনির বাবা কী বলেছেন -
‘‘আমার ছেলে তার সাথে ছিল। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী আমার ছেলেকে বলেছে যে তাকে ভ্যানে ও থানায় মারধর করা হয়েছে, আমার ছেলে তাকে না নিতে অনুরোধ করেছিল, কিন্তু তাকেও মারধর করা হয়েছিল, তার জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। আমি নিরাপত্তা অফিসারদের বডি-ক্যামেরা দেখাতে বলেছিলাম, তারা আমাকে বলেছিল যে ক্যামেরাগুলোর ব্যাটারি ফুরিয়ে গেছে। তারা মিথ্যা বলছে। তারা মিথ্যা কথা বলছে। সবকিছুই মিথ্যা… আমি যতই মিনতি করি না কেন, তারা আমাকে আমার মেয়েকে [মৃত্যুর পরেও] দেখতে দেয়নি।’’

ইরানের ইসলামিক বিপ্লব ও বাধ্যতামূলক মাথার স্কার্ফ

ইরানে ইসলামি বিপ্লবের প্রাক্কালে আয়াতোল্লা খোমেইনী ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ইরানের শেষ রাজা মোহাম্মদ রেজা পাহলভি দেশ ছেড়ে মিশরে আশ্রয় নেন। তখন ফ্রান্স থেকে ফিরে আসেন খোমেইনী। গোটা আন্দোলন সংগ্রামে রাশিয়াপন্থি বামগোষ্ঠী ইরানের তুদে পার্টি খোমেইনীকে সমর্থন করেছে এবং বিপ্লবের পক্ষে থেকেছে। যে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে একত্রিতভাবে খোমেইনী অনুসারীরা রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ করেছিল বিপ্লব পরবর্তী সময়ে তাদেরই ধ্বংস করতে রাষ্ট্রশক্তিকে চূড়ান্তভাবে তারা ব্যবহার করে। ১৯৮২ সাল থেকে তুদে পার্টিকে ইরানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরে অধিকাংশ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে, হাজার হাজার পার্টি সদস্য ও সমর্থককে আটক করে তুদে পার্টিকে বিনাশ করা হয়।

আজকে, প্রায় বিরোধীহীন রাজনৈতিক পরিসরে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ অটুট রাখতে এবং নারীদের ‘তাদের জায়গায়’ রাখতে সেই রাষ্ট্রশক্তিকেই প্রায় একইভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসলামিক বিপ্লবের পরে, নয় বছরের বড় শিশু, কিশোরী, মহিলাদের আবশ্যিকভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয়। বিবাহিত মহিলারা স্বামীর অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারেন না। সেপ্টেম্বরে ইরানের মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক নিলোফার আরদালান মালয়েশিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে পারেননি কারণ তার স্বামী তাকে ভ্রমণ করতে নিষেধ করেছিলেন।

ইরানে ফুটবল ও ভলিবল অত্যন্ত জনপ্রিয়, অনেকটা আমাদের ক্রিকেটের মত। ইরানে নারীদের ফুটবল ও ভলিবল খেলার অনুমতি আছে। কিন্তু তাদের পুরুষদের ভলিবল খেলা দেখার অনুমতি দেওয়া হয় না, এমনকি তাদের ভাই, ছেলে বা স্বামীরা খেললেও তা দেখার অনুমতি নারীদের নেই। মহিলাদের বাইরে রাখার জন্য প্রায়ই স্টেডিয়ামের চারপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, কর্মসংস্থান সহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ইরানী নারীরা হয় সীমাবদ্ধ অধিকার পায় অথবা তাদের স্বামী বা বাবার কাছ থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয়।

ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। বাকস্বাধীনতার উপর কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ বলছে, ইরান হল সাংবাদিক, ব্লগার এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারগুলোর একটি। এখানে এমনকি একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য জেলে যেতে হতে পারে। অবশ্য এই নিয়ে বেশি কথা বলা আমাদের সাজে না।

এ লড়াই নিজেকে নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক অধিকারের লড়াই

এতকিছুর পরেও বেশিরভাগ ইরানি ধর্মীয় বিধিবিধানের বাধ্যতামূলক প্রকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে, হিজাব পরা নারীর ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করে। ২০২০ সালে একটি স্বাধীন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৭২% মানুষ বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরোধিতা করেছে।

রাষ্ট্র সেকথা জানে, জানে ইরানের স্বাধীনতাকামী নারীরা জোর করে মাথা ঢাকা দেওয়া পছন্দ করে না। তাই মাসা আমিনির মৃত্যুর পরে স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য সক্রিয় প্ৰচেষ্টা না নিয়ে তেহরান ও অন্যান্য শহরে সরকার আরও বেশি করে স্বাধীনতাকামী নারী ও পুরুষের বিরুদ্ধে বেপরোয়া দমনমূলক হিংস্রতা চালাচ্ছে। ভিন্নমতকে দমন করার জন্য, নিরাপত্তা বাহিনী নৃশংসভাবে বিক্ষোভকারীদের উপর অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে গুলি করছে, ভিন্নমত পোষণকারী ছাত্রদের জোর করে মানসিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে এবং এমনকি প্রতিবাদকারীকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বন্ধ করেছে, ইরানের যে সেলিব্রিটিরা গ্রেপ্তার এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে সমর্থন করেছে তাদের শাস্তি দিয়েছে।

শুরু হয়েছিল আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু দিয়ে, ক্রমশ বিক্ষোভকারীরা বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবি করতে শুরু করেছে। ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক বিক্ষোভের আগুন থামছে না। স্কুল-ছাত্রীরা স্লোগান দিচ্ছে, শ্রমিকরা ধর্মঘট করেছে এবং বিক্ষোভকারীরা ৮ অক্টোবর সারা ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পরে দুটি ১৬ বছর বয়সী কিশোরীর সাম্প্রতিক মৃত্যু জনসাধারণের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদী স্লোগান দিছে ‘নারী, জীবন এবং স্বাধীনতা’। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কুর্দি মুক্তি আন্দোলন থেকে উদ্ভূত এই স্লোগানের সমালোচনা করেছেন, বলেছেন, ‘যারা এই স্লোগান দিচ্ছেন তারা নারীর নগ্নতা এবং নির্লজ্জতার মধ্যে স্বাধীনতা দেখেন’। তেহরানে বিক্ষোভকারীরা ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলী খোমেইনীর পতন চেয়ে স্লোগান দিয়েছে। স্লোগানে তারা বলেছে, ‘স্বৈরশাসক নিপাত যাক।’ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শন করার সময় তেহরানের মহিলা শিক্ষার্থীরা ‘বিদায় হোন’ বলে জিগির তুলেছে।

মাসা আমিনি এখন শুধু রাষ্ট্রের হাতে খুন হওয়া এক কুর্দি নারীর প্রতীক নন, তিনি সারা দেশের নারী স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ইরানের 'হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি' (এইচ.আর.এন.এ.) অনুমান করেছে যে হেডস্কার্ফের নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগে মাসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর কারণে বিক্ষোভে এখনও পর্যন্ত অন্তত ২৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আছে ৩২টি শিশু। আছেন পুরুষ, নারী। কিশোরী বা মধ্যবয়স্কা। এই মুহূর্তে কত হাজার প্রতিবাদী কারাগারে আটক হয়েছেন সেই সংখ্যা মানবাধিকার সংগঠন দিতে পারেনি।

এই তোমার রাজত্ব, খুনী!

অবশ্য, মার্কিন-সমর্থিত শাহের রাজতন্ত্রের পতনের পর গত চার দশক ধরে আরোপিত কঠোর সামাজিক ও রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ক্রমবর্ধমান হতাশা সত্ত্বেও সরকার পতনের কাছাকাছি বলে মনে করেন না দেশ বিদেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিক্ষোভের বর্তমান তরঙ্গ এই মুহূর্তে আরও খোলামেলা এবং সহনশীল সরকারের দিকে যেতে বাধ্য করতে পারে এমনও হয়তো নয়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে প্রতিবাদের প্রতিটি তরঙ্গ - ২০০৯, ২০১৭, ২০১৯ এবং অন্যান্য - মৌলবাদী সরকারের বৈধতার একেকটি স্তর ছিনিয়ে নিয়েছে। বর্তমান অসন্তোষ, প্রতিক্রিয়াশীল শাসনের ভিত্তিমূল নারী বিরোধী মতবাদগুলির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, রাস্তায় জমায়েতগুলো আর সংস্কারের জন্য নয়, তারা সরকার বদলের পক্ষে জনমত গঠন করছেন। কিন্তু কারা তারপরে হাল ধরবে তা স্পষ্ট নয়। বিকল্প নেতৃত্ব দানা বেঁধেছে কিনা বোঝা যায় না। তাই দেশে দেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেন এই বিশাল বিক্ষোভ থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন।

অবশ্য এই বিক্ষোভ চার সপ্তাহের বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে ক’জনই বা আশা করেছিলেন?

সংস্কারবাদী কণ্ঠরা শাসককে সাবধানে চলার জন্য সতর্ক করেছে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০ অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনার সময়, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেছেনঃ ‘‘মানুষকে উপেক্ষা করা যেতে পারে এমন ধারণা করা ভুল। আপনি সহিংসতা দিয়ে শাসন করতে পারবেন না।’’

বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরে, শাসকরা প্রতিবাদকারীদের ইসলামী বিপ্লবের শত্রু বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। আমিনির মৃত্যুর পর, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে মানবাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমি দ্বৈত মানদণ্ড নিয়ে অভিযোগ করেছেন। সরকার বিক্ষোভকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ইরানের শত্রুদের একটি চক্রান্ত হিসাবে বর্ণনা করেছে। পশ্চিমি দ্বৈত মানদণ্ড অবশ্যই আছে, কিন্তু পশ্চিমিদের অপরাধের জন্য নিজের দেশের নারীর ওপরে রাষ্ট্রশক্তির ভয়ঙ্কর অপব্যবহার ন্যায্যতা পায় না। যারা রাস্তায় ফেলে মহিলা, কিশোরী ও বালিকাদের ওপরে চাবুক চালায়, গুলি চালিয়ে মারে, নাগরিকদের অপহরণ করে জেলের মধ্যে খুন করে যাদের একমাত্র অপরাধ তারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চেয়েছিল, তারা শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের ভুল দিকে রয়েছে। সময়ের বিপরীত দিকে আছে। তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে।

তাদের হাতে নারী, শিশুর রক্ত লেগে আছে।

বিকল্প তৈরি নেই তবু পরাজয় কোন বিকল্প নয়

‘ছোট বয়স থেকেই, মেয়েরা এই ধারণাটিকে আত্মস্থ করে যে তাদের শরীরে মৌলিকভাবে পাপ এবং লজ্জাজনক কিছু আছে,’ লিখেছেন আভা হোমা, একজন ইরানি কুর্দি এবং 'ডটারস অফ স্মোক অ্যান্ড ফায়ার'-এর লেখক৷ ‘আমাকে যে ঘোমটা পরতে হয়েছিল তা অন্যদের পাশাপাশি নিজের থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতীক ছিল।’

তারা বলেছেন, প্রজন্ম ধরে আমাদের শরীর ক্রোধ এবং শোক ধরে রাখে। আমরা এখন যা দেখছি তা হল দীর্ঘদিনের ক্রোধ শরীর থেকে স্রোতের মত বেরিয়ে এসে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা স্বীকার করি যে হারানোর মত কিছুই আর আমাদের অবশিষ্ট নেই। এই গভীর হতাশা একটি জনপ্রিয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এত খারাপভাবে বাঁচতে চাওয়ার মানে এটাই যে আপনি মরতে প্রস্তুত।

আজকে ইরানের নারীরা হিজাব পোড়াচ্ছে। চুল কেটে সেই চুল দিয়ে তারা পতাকা বানিয়েছে। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরাচ্ছে। এর অর্থ সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য। ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে সব থেকে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দেশটির নারীরা। আফাগানিস্তানেও একইভাবে নারীদের এমনকি শিক্ষার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজকের দিনে সমাজের ৫০ শতাংশ মানুষকে বাইরে রেখে কোন রাষ্ট্রচিন্তা করা সম্ভব নয়। এদের হারানোর কিছু নেই, জয় করার জন্য আছে ভবিষ্যত, ইন্টারনেট যুগের মানসিকতায় পরাজয় কোন বিকল্প নয়।

আপনার ভাষাতেই বলি -

উই শ্যাল নট - উই শ্যাল নট বি মুভড, উই শ্যাল নট - উই শ্যাল নট বি মুভড। জাস্ট লাইক এ ট্রি, দ্যাট ইজ স্ট্যান্ডিং বাই দি রিভার, উই শ্যাল নট বি মুভড।

- ইরানের প্রতিবাদী নারী ও পুরুষ।