আরেক রকম ● দশম বর্ষ একবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ নভেম্বর, ২০২২ ● ১৬-৩০ কার্তিক, ১৪২৯

সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষার বেহাল দশা


গোটা দক্ষিণ ভারত যখন শিক্ষাক্ষেত্রে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন নিয়ে উত্তাল, তখন এ রাজ্যের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীরাই মৌন হয়ে আছেন। অবশ্য বাংলার শিক্ষাবিদ বা বুদ্ধিজীবীদের দোষারোপ করা চলে না। আপাতত রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার অচলাবস্থা ও লাগামহীন দুর্নীতির শিকড় খুঁজতে ও কারণ অনুসন্ধানেই তাঁরা ব্যস্ত। যেভাবে রোমহর্ষক কাহিনির মত রোজই শিক্ষা জগতের এক একটি দুর্নীতির খবর সামনে আসছে তা সবাইকে অবাক করে দেওয়ার মতই। ফলে বাংলার বুদ্ধিজীবীদের এক অংশ যেমন এর বিরোধিতা করতে করতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন, অন্যদিকে রাজ্যের সরকারকে এই বিড়ম্বনা থেকে বাঁচাতে অন্যদল বুদ্ধিজীবীকে লড়ে যেতে হচ্ছে। মাঝখান থেকে যে রাজ্যের প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার মাজাটাই ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে সেদিকে আর কোনো নজর পড়ছে না।

অতি সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তার পদ থেকে বরখাস্ত করতে হয়েছে। কোর্ট বলছে এই পদে তাঁর নিয়োগ নিয়ম মেনে হয়নি। শুধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, খবরে প্রকাশ, রাজ্যের আরও অন্তত ২৩ জন উপাচার্যকেও সম্ভবত সরে যেতে হবে। তাদের নিয়োগও পদ্ধতি না মেনে হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই আচার্য তথা রাজ্যপালের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৭, তার ভেতর যদি ২৩টি ক্ষেত্রেই উপাচার্যের নিয়োগ প্রশ্নের সামনে পড়ে যায় তাহলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার হাল যে বেহাল হবে তা বলাই বাহুল্য। যদিও এই বিতর্কের আগেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় রাজ্যের শাসকদল রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এই আইন পাশ করিয়ে নেয়।

এই সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল তা নিয়ে নৈতিক আলোচনা চালানো যেতেই পারে। কিন্তু সর্বাগ্রে যে প্রশ্নটি তোলা উচিত যে, এই পরিবর্তন কি আদৌ রাজ্যের উচ্চশিক্ষার হাল বদলাতে উপযোগী না কি কেবল ক্ষমতা জাহির করার প্রয়াস? বর্তমানে রাজ্যের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সামগ্রিক অবস্থা খুবই শোচনীয়।

এমনিতেই রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানো দুঃসহ হয়ে উঠছে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে। দীর্ঘদিন রাজ্যের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ অত্যন্ত অনিয়মিত এবং অপর্যাপ্ত। তারপর যুক্ত হয়েছে এই অপদার্থতাকে ঢাকতে একদিকে অবসরের বয়স ক্রমাগত বাড়িয়ে চলা, অন্যদিকে চুক্তি ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা। রাজনৈতিক প্রতিপত্তি কায়েমের লক্ষ্যে সেই নিয়োগেও হয়েছে অজস্র দূর্নীতি। এর ফলে একদিকে যেমন কর্মীদের কাজের উৎসাহ কমেছে, তেমনই দক্ষ কর্মীর অভাবে কাজ সম্পন্ন হতেও অনেক বেশী সময় লাগছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের সরকার পরিচালিত উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে এক ধরণের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। হয়ত রাজ্যের সরকার দাবী করবেন যে তাদের আমলে রাজ্যের দুটি প্রাচীন ও প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রতিক এনআইআরএফ তালিকায় উপরে উঠে এসেছে এবং দেশের প্রথম ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর জায়গা করে নিয়েছে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই তালিকায় শিক্ষাপ্রতিস্থানের মানের কতটা সুবিচার হয় তা বিতর্কিত। বহু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অনেক গুণমানে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টপকে তালিকায় উপরে উঠে এসেছে, যা প্রশ্নাতীত নয়।

এই রাজ্যের উচ্চশিক্ষার হাঁড়ির হাল বোঝা যায় যদি ছাত্র ভর্তি, ড্রপ আউট, উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন জনজাতির আনুপাতিক উপস্থিতি হিসাব করা যায়। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে রাজ্যের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির হার জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে। উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সমীক্ষা, এআইএসএইচই রিপোর্ট অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জাতীয় গড় যেখানে ২৭.১% সেখানে রাজ্যের গড় ১৯.৯%। ছাত্র এবং ছাত্রী ভর্তির হারেও এ রাজ্যে জাতীয় গড়ের চেয়ে পেছনে। ছাত্র ভর্তির জাতীয় গড় যেখানে ২৬.৯% সেখানে রাজ্যের গড় ২০.৩% আর ছাত্রীদের ক্ষেত্রে জাতীয় গড় ২৭.৩% আর রাজ্যে তা ১৯.৬%। তফসিলি জাতি বা উপজাতির ক্ষেত্রেও এই রাজ্যের ছাত্র ভর্তির গড় জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক পিছনে। তফসিলি জাতি ও উপজাতির ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির গড় যথাক্রমে ২৩.৪% ও ১৮%। আর রাজ্যের ক্ষেত্রে এই দুই গড় যথাক্রমে ১৪.৯% ও ১১%। এর থেকে বোঝা যায়, শিক্ষায় অগ্রগণ্য এই রাজ্যে আজ ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় আসার আগ্রহ কমছে বা রাজ্যের সরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ কমছে। এমনকি ভারতের নবজাগরণের জন্মস্থান ছিল যে রাজ্য সেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভেতর শিক্ষার প্রসারের কাজটিও আজ অবহেলিত। বিদ্যাসাগরের জন্ম যে রাজ্যে সেখানে উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের আনুপাতিক উপস্থিতি আজও কম, যা খুবই উদ্বেগের। ফলে সর্বভারতীয় তালিকায় কলকাতা বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ১০-এ থাকলেও রাজ্যের সামগ্রিক উচ্চশিক্ষার হাল যে খারাপ তা এই সামগ্রিক তথ্যগুলি দেখলেই বোঝা যায়।

রাজ্যজুড়ে বিগত ১০ বছরে বিভিন্ন জেলায় কমবেশী প্রায় ১৯টি নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪০-এর বেশী সরকারি কলেজ তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যের সরকার তা গর্ব করে বলেন। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হলেই কি উচ্চশিক্ষা তরতর করে এগিয়ে চলে? অধিকাংশ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমস্ত বিষয় পড়ানোর মত উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। বিজ্ঞান ভিত্তিক বিষয়গুলি পড়ানোর জন্য যে পরীক্ষাগারের পরিকাঠামো দরকার পড়ে তা বোধহয় রাজ্য সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মাথায় ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঢঙে একটি বাড়ি খাড়া করেই উচ্চশিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে গিয়েছিলেন তারা। তার ফলে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষাগারভিত্তিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে চায় না, অথবা নিরুপায় হয়ে ভর্তি হয়। যার ফলে সামগ্রিক ভর্তির হার এ রাজ্যে এত কম। উচ্চশিক্ষায় ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতও এ রাজ্যে খুবই করুণ। উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের জাতীয় গড় যেখানে ২৬ সেটাই রাজ্যের ক্ষেত্রে ৩৩। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই অনুপাত জাতীয় হারের চেয়ে আরোই খারাপ। সুতরাং এটা সহজেই অনুমেয় যে রাজ্যের সরকার নতুন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণায় যত তৎপর, সেখানে স্থায়ীভাবে পঠন-পাঠন চালু রাখার ক্ষেত্রে ততই উদাসীন। নির্বাচনী চমকের জন্য এবং নির্মাণ সামগ্রীর বরাত পছন্দের লোককে পাইয়ে দেওয়ার জন্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধন যতটা জরুরী, সেই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা আদৌ হবে কিনা সেটা ততটাই গুরুত্বহীন শাসকদের কাছে। ফলে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। যদিও বা কলেজ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মাঝেমধ্যে নিয়োগ হয়, সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ ওঠে। আর মাঝখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হচ্ছেন অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করে অবস্থা সামাল দিতে। আর এই সুযোগটাই যেন রাজ্যের বর্তমান সরকার খুঁজছিল। ২০১৯ সালে সরকার ঘোষণা করে দিল যে বিভিন্ন কলেজে যে অস্থায়ী শিক্ষকরা আছেন তাদের চাকরি ৬০ বছর অবধি পাকা। অর্থাৎ এনারা প্রায় তাদের পূর্ণ কর্মজীবন এভাবে অস্থায়ী নিয়োগ নিয়েই কাটিয়ে দেবেন। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম অস্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশী। এই বিপুল সংখ্যক শূন্যপদে নিয়োগ বন্ধ। কাজ চলছে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে। এর ফলে একদিকে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করার আর্থিক বোঝা থেকে সরকার নিজেকে মুক্ত করল, অন্যদিকে এই বিপুল সংখ্যক যুবক-যুবতীদের স্থায়ী চাকরি পাওয়ার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেও তাদের এক ধরনের সুবিধা দেওয়ার বদান্যতা দেখিয়ে সরকার এঁদের হাততালি কুড়োচ্ছে। আর সব মিলিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার গুণমান। যেহেতু এই নিয়োগগুলি সব ক্ষেত্রেই কলেজের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের নিজস্ব এক্তিয়ারে ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যোগ্যতামান নির্ধারণের কোন সাধারণ মাপকাঠি থাকে না। ফলে এঁদের গুণমানের কোন সাধারণ মাপ থাকে না। অথচ ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হন এঁদের ওপরেই ভরসা করতে। উচ্চশিক্ষায় এ রাজ্যে ছাত্র ভর্তির হার কম হওয়ার এটিও একটি কারণ বটে।

এর উপর যুক্ত হয়েছে আর্থিক অনুদানের অপ্রতুলতা। রাজ্যের অধীনে থাকা সরকারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইউজিসি-র আর্থিক অনুদান কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় 'রুসা' প্রকল্পের টাকা না পেয়ে ধুঁকছে। মহামারী পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকারও বেতন বহির্ভুত খাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদান ৪০%-এর উপর কাটছাঁট করেছে। ফলে আজকে এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পঠনপাঠন ও গবেষণার কাজ লাটে উঠতে বসেছে। কর্তৃপক্ষ বাধ্য হচ্ছেন প্রাক্তনীদের কাছে হাত পাততে। এ শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নয়। সমস্ত রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একই অবস্থা চলছে। রাজ্যের সরকার আচার্য হিসাবে রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে নির্বাচন নিয়ে যত তৎপর ও মুখর, তার সিকিভাগ উৎসাহও এই সমস্যা দূরীকরণে দেখান না। বরং কিয়দংশে সমস্যার কারণ তারা নিজেরাও। এর সাথে যুক্ত হয়েই আছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোর করুণ অবস্থা। টানাটানির সংসারে বাহ্যিক আবরণ নিয়ে মাথা ঘামনোর সুযোগ নেই। কিন্তু সেই বাহুল্য আপাতত ভুলে থাকলেও প্রয়োজনীয় মেরামত বা উন্নতিবিধানের কাজও যদি বন্ধ রাখতে হয় তাহলে আর যাই হোক সুস্থ পড়াশোনার পরিবেশ বজায় থাকেনা। ছাত্রাবাসের অপ্রতুলতা এক জীবন্ত সমস্যা এ রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে। ফলে এক বড় অংশের ছাত্র-ছাত্রী বাধ্য হয় বাড়তি খরচ করে ভাড়া থাকতে অথবা নিরুৎসাহিত হয় পছন্দের প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেয়েও পড়ার ক্ষেত্রে।

এহেন নানাবিধ ছোট বড় সমস্যা এ রাজ্যের সরকার পরিচালিত উচ্চশিক্ষার পরিকাঠামোটিকে ধ্বংস করছে। যার ফলে লাফিয়ে বাড়ছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। আর তার সাথেই লাফিয়ে বাড়ছে শাসকদলের নেতা, মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ধার নিয়ে এইসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। আর নির্লজ্জ সরকার এর প্রতিবিধান না করে, উল্টে নিয়ে আসছে 'স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড'-এর মত প্রকল্প। তারা উৎসাহ দিচ্ছেন ধার করে পড়াশোনা চালাতে। রাজ্যের স্কুল শিক্ষায় তো বেসরকারি পুঁজির দাপট বেড়েছে বহুদিন, বর্তমানে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধুঁকছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার অভাবে। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও সেই পরিস্থিতি আসতে আর দেরী নেই। এর ফলে এমন এক পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে যেখানে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আঙিনায় ঢুকতেই পারবে না। শিক্ষার অধিকার কেবল কুক্ষিগত হবে উচ্চকোটির কাছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা যদি অবিলম্বে না করা যায়, তাহলে আবার আমরা ফিরে যাব সেই ঔপনিবেশিক সময়ে যেখানে কেবল আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ঘরের ছেলেমেয়েরাই শিক্ষার অধিকার পাবে। এ রাজ্যের সচেতন নাগরিকদের উচিত এই অবস্থার বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করা এবং রাজ্যের সরকারকে বাধ্য করা এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে। শিক্ষা ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। রাজ্য যদি তার অধিকার, সদিচ্ছার প্রয়োগ না ঘটায় তবে খামোকা কেন্দ্রের সরকারকে দোষারোপ করলে খানিক হাততালি জোটে বটে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। অবশ্য দুর্নীতির অতলে তলিয়ে যাওয়া একটি রাজ্যের সরকারের থেকে এই বিচক্ষণতা আশা করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা হয়ত পাঠকই বুঝতে পারেন। তাই এ রাজ্যের সমস্ত সচেতন নাগরিককে অবিলম্বে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষায় চলা সমস্ত রকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ সংগঠিত করতে হবে এবং মানুষকে সাথে নিয়ে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতেই হবে। প্রতিবাদ আন্দোলনের সাথেই প্রয়োজন একটি জোরালো শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলা যার অভিমুখ হবে শিক্ষার সর্বস্তরে প্রসার, অধিক সংখ্যায় প্রথম প্রজন্মকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তোলা। এই বিষয়ে সমাজের শিক্ষিত ও প্রগতিশীল অংশকে সদর্থক ভূমিকা পালন করতেই হবে।