আরেক রকম ● দশম বর্ষ প্রথম সংখ্যা ● ১-১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ● ১৬-২৯ পৌষ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

আরেক রকমঃ দশম বর্ষ

সুজিত পোদ্দার


আরেক রকম পত্রিকা দশম বর্ষে পদার্পণ করলো। নিঃসন্দেহে এ এক আনন্দের খবর। এই সূত্রে মনে পড়ে গেল পত্রিকার সূচনাপর্ব ও তারও আগের কিছু টুকরো টুকরো কথা।

অশোক মিত্র বরাবরের বামপন্থী। তিনি মার্কসবাদী এবং সমাজতন্ত্রে তাঁর অগাধ আস্থা। প্রথমে কমিউনিস্ট পার্টি পরে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সাহচর্যে থেকেই নিজের মতামত প্রকাশ করতেন। এক সময় বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মতের অমিল হওয়ায় মন্ত্রীত্ব এবং দলের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক ছেদ করেন। তবে কোনোদিন দলের বিরোধিতা করেননি। কখনও কখনও নিজের মত প্রকাশ করতেন। যার সঙ্গে হয়তো পার্টির সিদ্ধান্তের মিল হত না।

২০০৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর, বামফ্রন্ট সরকার দ্রুত শিল্পায়ন এবং নগর উন্নয়ণের কর্মসূচি নেয়। শহরের আশেপাশে উপনগরী, প্রশস্ত সড়ক, নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। সিঙ্গুরে গাড়ির কারখানা ও নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব প্রতিষ্ঠার কাজেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এইসব বহুবিধ প্রকল্পের জন্য প্রশাসনিকভাবে জমি অধিগ্রহণের কারণে বামফ্রন্ট জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে, বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে বামফ্রন্ট সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হতে থাকে। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এর প্রতিফলনও দেখা যায়। কিন্তু সরকার নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেও বামফ্রন্ট বিরোধিতা আরও প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনার পর কলকাতা শহরেও বুদ্ধিজীবীরা বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করেন। রাজপথে মিছিল হয়। ততদিনে রাজ্যের প্রায় সব বিরোধী দল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বামফ্রন্টের বিরোধিতায় ময়দানে শামিল। গ্রামাঞ্চলে মাওবাদীরা সক্রিয়। নন্দীগ্রামে মাওবাদী আর স্থানীয় বিরোধীরা একত্রিত হয়ে একটা মুক্তাঞ্চল তৈরি করে ফেলেছে। সরকার অসহায়। সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস দল জাতীয় সড়কের ওপর মঞ্চ বানিয়ে পথ অবরোধ করে। সবমিলিয়ে এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যে গাড়ির কারখানা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার প্রাক মুহূর্তে প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে মালিকপক্ষ অর্থাৎ টাটাগোষ্ঠী সিঙ্গুর পরিত্যাগ করে। এর প্রতিফলন ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের ভরাডুবি। একসময়ে পার্টির গণ্ডীর বাইরের বহু বাম মনেভাবাপন্ন মানুষ বামফ্রন্টকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে তাঁরাও নিজেদের বামফ্রন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করেন।

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বামপন্থী দলের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি অশোক মিত্র-র সঙ্গে দেখা করে কিছু করতে অনুরোধ করেন, যাতে রাজনীতির গণ্ডীর বাইরের বাম মনোভাবাপন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। অশোকবাবু ওঁদের সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশের কথা বলেন। ওঁরা পরোক্ষভাবে যতটুকু সম্ভব সহায়তার আশ্বাস দেন। সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক পত্রিকা নিজ দায়িত্বে প্রকাশ করা অশোক মিত্র-র বহু দিনের বাসনা। তিনি চাইতেন এমন একটা পত্রিকা হবে যেখানে উনি স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে পারবেন।

অশোকবাবু কিছুদিন পর মিহির ভট্টাচার্য ও মালিনী ভট্টাচার্যকে ডেকে নতুন একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা বলেন। সেই আলোচনায় আমিও উপস্থিত ছিলাম। এরপর অশোকবাবু শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর একদিন শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে অশোকবাবু নিজেই চলে গেলেন। সেখানে মিহির ভট্টাচার্য, গৌরী চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করার কথা আলোচনা হয়। স্থির করা হয় সম্পাদকমন্ডলী গঠন করা হবে। অশোক মিত্র হলেন সম্পাদক। সম্পাদকমন্ডলীর অন্যান্য সদস্যরা হবেন শঙ্খ ঘোষ, গৌরী চট্টোপাধ্যায়, মিহির ভট্টাচার্য, কুমার রানা, কৌশিক সেন প্রমুখ। পত্রিকার প্রকাশকাল পাক্ষিক। ২০১২-র আগস্ট-সেপ্টেম্বরের সভায় স্থির করা হয় পত্রিকার দপ্তর, ছাপার সংস্থা, অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে। অশোকবাবু নিজেই অর্থ সংগ্রহ করার দায়িত্ব নিলেন। মিহিরদা ছাপাখানার সাথে কথা বললেন। অভিজিত মুখার্জি পত্রিকার নামের অনুমোদনের দায়িত্ব নেন। এইভাবে কাজ ভাগ করা হয়। পত্রিকার স্বত্ত্বাধিকারী 'সমাজ চর্চা ট্রাস্ট'। অনেক আলাপ-আলোচনার পর 'সমাজ চর্চা ট্রাস্ট' গঠিত হল। ট্রাস্ট-এর সদস্য হলেন অশোক মিত্র, অশোকনাথ বসু, মিহির ভট্টাচার্য, তীর্থঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, তৃষিতানন্দ রায়, অভিজিত মুখার্জি এবং সুজিত পোদ্দার। ট্রাস্টের সভাপতি অশোক মিত্র। অশোকবাবু ট্রাস্টের আজীবন সদস্য সংগ্রহ করে প্রায় ৪/৫ লক্ষ টাকার তহবিল তৈরি করেন। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়।

এরপর সম্পাদকমন্ডলীর সভা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পত্রিকার প্রতি সংখ্যাই ৫৬ পৃষ্ঠার হবে। মাসের ১লা এবং ১৬ তারিখ প্রকাশিত হবে। পত্রিকায় দুটি সম্পদকীয় এবং তিনটি সমসাময়িক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। আর বাকি সব প্রবন্ধ। প্রবন্ধগুলি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে থাকবে। রাজনীতি অবশ্যই বামপন্থী আদর্শ মেনেই লেখা হবে। তবে কোনো উগ্রপন্থী লেখা - সে গলা কাটার রাজনীতিই হোক বা মন্দির-মসজিদ ভাঙ্গার রাজনীতিই হোক, আরেক রকমে ছাপা হবে না। এর বাইরে প্রত্যেকের স্বাধীন মনোভাব প্রকাশ করার অধিকার থাকবে। সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যরা খুবই উৎসাহিত। অশোক মিত্র, শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জনে সকলেই উৎসাহী। প্রত্যেকেই দায়িত্ব নেন শুধু নিজেদের লেখা নয়, সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের কাছ থেকে লেখা আদায় করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে এই পত্রিকার সঙ্গে যু্ক্ত করতে হবে। মানিকতলার গড়পার অঞ্চলে এস পি কমিউনিকেশন-এ 'আরেক রকম' ছাপার ব্যবস্থা হয়। প্রথম দিন থেকে প্রতিটি সংখ্যা নির্ধারিত সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। ওঁদের প্রতিটি কর্মী এই ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন। যতদিন পত্রিকা ছেপে প্রকাশিত হয়েছে এই সংস্থা থেকেই ছাপা এবং প্রকাশিত হয়েছে।

ভারত সরকারের রেজিস্ট্রার অফ নিউজপেপারস্ অফ্ ইন্ডিয়া (আর এন আই) থেকে পত্রিকার নামের অনুমোদন আদায়ের জন্য অভিজিত মুখার্জির সঙ্গে আলোচনা করা হল। প্রথমে 'অন্যরকম' নামের জন্য আবেদন করা হলেও তা গৃহীত হয়নি। পরে 'আরেক রকম' নামের অনুমোদন পাওয়া যায়।

'আরেক রকম'-এর এই যাত্রাপথ কথনই খুব মসৃণ ছিলনা। পত্রিকা অবশ্যি প্রতি মাসের ১লা এবং ১৬ তারিখ নিয়ম মেনে প্রকাশিত হয়েছে। শুধু প্রকাশিত নয়, প্রকাশিত হওয়ার এক দিনের মধ্যে জিপিও-তে গিয়ে ডাক ব্যবস্থা মারফত গ্রাহকদের কাছে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম করা সম্ভব ছিল না। কারণ পোস্ট অফিসের নিয়মে একদিন দেরি হলে ওরা আর কাগজ নেয় না অর্থাৎ অল্প ডাক মাশুল দিয়ে পত্রিকা পাঠানোর সুযোগ বন্ধ। অন্যথায় পত্রিকা পাঠানোর খরচ বহুগুণ বেড়ে যায়।

দশ বছরে পদার্পণ করার মুহূর্তে পত্রিকার বিপনন ব্যবস্থা কী রকম ছিল এবং কীভাবে এতরকমের প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও প্রতিটি সংখ্যা যথাসময়ে গ্রাহক/পাঠকের কাছে পাঠানো সম্ভব হয়েছে, এই বিষয়টি আজকের আমাদের পত্রিকার পাঠককে অবহিত করার দায় অস্বীকার করার উপায় নেই। পত্রিকা সম্পাদনার বিষয়টি বহুবার বহুভাবে আলোচিত। পত্রিকার গুণমান সঠিক না হলে পাঠক মতামত জানাতে পারেন, সমালোচনা করতে পারেন, মান উন্নয়নের জন্য পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু বিপণন?

ফিয়ার্স লেন থেকে পত্রিকা প্রকাশনার কাজ শুরু হয়েছিল। জনৈক শুভানুধ্যায়ীর সহায়তায় ওখানে আমাদের দপ্তর খোলার সুযোগ হয়। দপ্তর চালানোর জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মচারী রবিন মজুমদার। ওঁকে কোনো সহযোগী দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু কাজের চাপে রবিনবাবু কিছুদিন পর চন্ডী পাইনকে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে পত্রিকার কাজে সংযুক্ত করেন। রবিনবাবু প্রতিদিন নিজের পেনশনের পয়সা খরচ করে মধ্যমগ্রাম থেকে কলকাতার দপ্তরে যাতায়াত করতেন। দপ্তরের কাজ ছাড়াও গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তাঁদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনতেন।

এই প্রসঙ্গে একথাও বলা দরকার ২০১৩-র ১লা জানুয়ারি 'আরেক রকম' প্রকাশিত হবে যখন সিদ্ধান্ত হয় তখন কিন্তু কীভাবে পত্রিকা গ্রাহক/পাঠকের কাছে বিলি/বিক্রি করা হবে তা নিয়ে একবারও কোনো আলোচনা হয়নি। তখন ইমানুল হকের সহায়তায় কলকাতার একটি বেসরকারী বিপণনকারী সংস্থার মাধ্যমে আমাদের পত্রিকাও বিলি/বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। একথা সত্যি তখনকার মতো এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আমাদের জানা ছিল না। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা বুঝতে পারি বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। এক বছরের মধ্যেই রবিনবাবু নিজের হাতে বিলি ব্যবস্থার পুরো ব্যাপারটাই সামলাতে শুরু করেন। পত্রিকা কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তের বহু গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন রবিনবাবু। দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে গড়ে ওঠে পত্রিকা বিপণনের এক নেটওয়ার্ক। অনেকের অজানা কথা এই সুযোগে কিছুটা জানিয়ে রাখলাম। এই ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে পত্রিকা দশ বছরে নিয়ে আসা সহজ হত না।

২০১৩-এ 'আরেক রকম' প্রকাশিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অশোক মিত্র শারীরিকভাবে অনেকটা অসমর্থ হতে থাকেন। ফলে তাঁর পক্ষে নিয়মিত প্রেসে গিয়ে প্রুফ দেখে প্রিন্ট অর্ডার দেওয়া অসম্ভব হতে থাকে। অশোকবাবুর অনুরোধে সম্পাদক না হয়েও শঙ্খ ঘোষ সম্পাদনার দায়িত্ব নেওয়ায় প্রতিটি সংখ্যা নির্ভুলভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। প্রথম বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর শঙ্খবাবু সম্পাদকমন্ডলী থেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে অব্যাহতি নেন। কিন্তু 'আরেক রকম'-এর সঙ্গে আজীবন সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। কিছুদিন পর কালীকৃষ্ণ গুহকে সম্পাদক করা হয়। এরপর সম্পাদক হলেন কুমার রাণা। কালীকৃষ্ণবাবু সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এখনও আছেন। শঙ্খবাবুর পর সম্পাদকমন্ডলী থেকে বিদায় নেন মিহির ভট্টাচার্য, কৌশিক সেন এবং কুমার রাণা। কুমার রাণা চলে গেলে, শুভনীল চৌধুরীকে সম্পাদক করা হয়। সম্পাদকমন্ডলীতে নতুনভাবে যুক্ত হন প্রথমে শুভনীল চৌধুরী। পরে সম্পাদকমন্ডলীতে একে একে যুক্ত হয়েছেন ইমানুল হক, প্রণব বিশ্বাস, শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য এবং অমিতাভ রায়।

দশ বছরের যাত্রাপথে 'আরেক রকম' ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সদা সতর্ক এবং সরব থেকেছে। সন্ত্রাসবাদ, স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও 'আরেক রকম' সবসময়ই সোচ্চার। শুধু দেশে নয় পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে, যখন যেখানে সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী নীতি মানুষের জীবনে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, 'আরেক রকম' তার বিরুদ্ধে মুখর। পুঁজিপতিদের স্বার্থে কেন্দ্রের সরকার দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদ বিলগ্নিকরণ তথা বিক্রি করার যে নীতি নিয়েছে তার বিরুদ্ধেও 'আরেক রকম' সরব। পুঁজির স্বার্থে কেন্দ্র যে কৃষি আইন পাশ করেছিল তার বিরুদ্ধে কৃষকের সংগ্রামের পাশে থেকেছে 'আরেক রকম', যতদিন না কৃষকরা তাঁদের দাবি আদায় করতে সফল হয়েছেন।

প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা (জানুয়ারি ১-১৫, ২০১৩) থেকে অষ্টম বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা (মার্চ ১৬-৩১, ২০২০) পর্যন্ত এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। ২০১৮-র পয়লা মে অশোক মিত্রের প্রয়াণের পরেও 'আরেক রকম' তাঁর প্রদর্শিত পথেই এগিয়ে চলেছে।

কোভিড সংক্রমণ জনিত কারণে ২০২০-র ২৪শে মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন চালু হওয়ার পর 'আরেক রকম' নিয়মিত প্রকাশের ধারাবাহিকতায় প্রথম ব্যতিক্রম ঘটে। অবরুদ্ধ জীবন। যাতায়াত বন্ধ। ছাপাখানাও বন্ধ। বাস্তবে জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। কাজেই ২০২০-র এপ্রিল ও মে মাসের চারটি সংখ্যা এবং জুন ১-১৫, ২০২০ সংখ্যার 'আরেক রকম' প্রকাশিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সম্পাদকমন্ডলী সিদ্ধান্ত নেয় জুন ১৬-৩০, ২০২০ সংখ্যা থেকে 'আরেক রকম'-এর অনলাইন সংস্করণ নিয়মিত প্রকাশিত হবে। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যা প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে অনলাইনে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। পত্রিকার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিনে www.arekrakam.com ক্লিক করলে পত্রিকার প্রতিটি প্রবন্ধ বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এবং অনলাইন সংস্করণ এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়।

'আরেক রকম' আগামী দিনেও একই পথে চলবে যে পথে অশোক মিত্র এবং শঙ্খ ঘোষ পত্রিকার যাত্রা শুরু করেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে 'আরেক রকম' ছেপে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত আমাদের অনেক আগ্রহী পাঠকের কাছে আমরা পাঠকের প্রিয় পত্রিকা পৌঁছে দিতে পারছি না। এই দুর্বলতার ব্যাপারে আমরা অবহিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিশ্চয়ই 'আরেক রকম'-এর মুদ্রিত সংস্করণ আবার প্রকাশিত হবে।