আরেক রকম ● দশম বর্ষ ঊনবিংশ-বিংশ সংখ্যা ● ১-৩১ অক্টোবর, ২০২২ ● ১৬ আশ্বিন - ১৫ কার্তিক, ১৪২৯
প্রবন্ধ
বনলতা সেন - একটি ব্যক্তিগত কুয়াশাপথ পরিক্রমা
পল্লববরন পাল
আমি তখন ক্লাশ সিক্স। দাদা নাইন। স্কুলে বাৎসরিক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আগে আবৃত্তি সহ অনেক প্রতিযোগিতা হতো বিভিন্ন ক্লাশ গ্রুপ করে। আমাদের ক্লাশ ফাইভ-সিক্সে সেবার আবৃত্তির কবিতা সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'ছাড়পত্র', দাদাদের নাইন-টেন-ইলেভেন গ্রুপে (পুরনো এগারো ক্লাশের উচ্চমাধ্যমিক সিলেবাসের) জীবনানন্দ দাশের 'বনলতা সেন'। অতএব বাবার সামনে দুই ভাই রোজ সন্ধ্যেবেলা আবৃত্তির তালিম। এবং সেখানেই আলাপ জীবনানন্দের সঙ্গে - যাঁকে আমার সেই ষষ্ঠমাত্রিক অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রাথমিকভাবে যথেষ্ট রহস্যজনক ও দুর্বোধ্যই ঠেকলো।
সাতের দশকের মাঝামাঝি আমাদের পাড়ায় যে মাঠে হুড়মুড় জন্ম নিলো একটা বিশাল সিনেমা হল, আমাদের বাল্যতরকালে সেই ফাঁকা এবড়োখেবড়ো মাঠেই বাহাত্তর ঘন্টা অবিরাম সাইকেল চালিয়েছিলো সূর্যদা - পাড়ার হিরো - সেই তিন দিন আমরা সকাল-বিকেল একাধিকবার মাঠের পরিধি বরাবর জম্পেশ ভীড় - বিস্ময় আর মুগ্ধতার - উরিব্বাস! বাহাত্তর ঘন্টা! নির্ঘুম! একটানা সাইকেল! - আমাদের সেই হাফপ্যান্টুলিত ডাংগুলি শৈশবচোখে পরম অতিমানবিক! ‘অ্যারাউণ্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ তো চুনোপুঁটি - সূর্যাহত - সেই পাড়াতুতো অহঙ্কারী বিস্ময়বোধও ধরাশায়ী হলো যখন শুনলাম - হা-জা-র ব-ছ-র ধরে কেউ হেঁটে চলেছেন - কোথায়? না, সমুদ্রে হাঁটছেন - ঘুটঘুটে অন্ধকারে হাঁটছেন - ইতিহাস বইয়ের মধ্যেও হাঁটছেন - ভাবা যায়? আমি তখন রবীন্দ্রনাথের 'মাগো আমায় ছুটি দিতে বল' আর 'আজি এ প্রভাতে রবির কর', নজরুলের 'দুর্গম গিরি কান্তার মরুর দুস্তর পারাবার'-এ কামাল পাশা, সত্যেন দত্তর ছিপখান তিন দাঁড় টেনে সদ্য সদ্য সুকান্তের ছাড়পত্রে আধুনিক কবিতার সঙ্গে প্রথম আলাপী। শুনলাম জীবনানন্দ নাকি সুররিয়ালিস্ট কবি - ‘সুররিয়ালিজম্’ বা ‘অধিবাস্তবতা’ জাতীয় শব্দের অস্তিত্বও তখন আমার অভিধানে নেই। বরং ‘আধুনিক কবিতা’ সম্পর্কে ধূমপানের মতো একটা নিষিদ্ধ প্রাপ্তবয়স্ক আকর্ষণ - বয়সটাই এমন - চোখ শুধু দুর্বোধ্য কুয়াশাময় রূপকথার রেলস্টেশন খুঁজে চলে।
ক্লাশ সিক্স। নার্সারি থেকে পড়া ইশকুলের মেয়েবন্ধুদের বুক ভারি হয়ে ওঠার বয়স - আস্তে আস্তে তারা নারী হয়ে উঠছে - গলাগলি বন্ধুত্বের চরিত্র বদলে অদৃশ্য পাঁচিল দূরত্ব তৈরি হচ্ছে - ক্লাশঘরের ডানদিকে মেয়েরা বাঁদিকে ছেলেরা, মাঝে কুয়াশা দেয়াল - মুহুর্মুহু সেই কুয়াশাভেদের তীব্র নেশায় আচ্ছন্ন থাকার বয়স - তখন সুচিত্রা সেনের পোস্টার আর সুমিত্রা সেনের গান আমার সৌন্দর্যের সংজ্ঞা - আমার নির্মেঘ আকাশ - আমার গৌরবের সেন বংশ - ‘তুমি যে আমার’ আর ‘সখি ভাবনা কাহারে বলে’ - সেই বয়সে দেখা হলো তৃতীয় সেন অর্থাৎ বনলতা সেনের সঙ্গে।
কিন্তু কোথাও যেন একটা তফাৎ - বোধে স্বপ্নে চিন্তায় - বনলতা সেনের চারপাশে যে কুয়াশা-রহস্যের দূরত্ব - কই, তা বাকি দুই সেনের তো নেই। অন্য দুজনই জ্যান্ত। বোধের শহরের স্পষ্টতর নিকটজন। আত্মীয়তর।
আস্তে আস্তে সেই কৈশোরের ভোরবেলার পল্লবিত পৃথিবী কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয় ভরে উঠতে লাগলো। ক্রমস্পষ্টতার যাত্রা শুরু হলো। আমার শৈশব পেরোনো হাত ধরলেন তৃতীয় সেন - শিশিরপাতের মতো সশব্দ উৎসবে।
১৯৩৪ সালে এ কবিতা রচনাকালে সিটি কলেজের সহকারী লেকচারারের চাকরি খুইয়েও কবি জীবনানন্দ কলকাতাবাসী। রুলটানা এক্সারসাইজ খাতায় কবিতা লিখতেন। তারপর ১, ২, ৩ নম্বর করে সযত্নে রেখে দিতেন খাতাগুলো। এর মধ্যে ৮ নম্বর খাতার ২৪ পৃষ্ঠায় লেখা কবিতা ‘বনলতা সেন’। খাতাগুলি সংরক্ষিত আছে জাতীয় গ্রন্থাগারে। ১৯৩৫ সালের ডিসেম্বরে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকার পৌষ ১৩৪২ সংখ্যায় প্রথম মুদ্রিত আত্মপ্রকাশ। ১৯৪২-এ নিজেরই প্রকাশনায় জীবনানন্দ আরও ১১টি কবিতা নিয়ে ১৬ পৃষ্ঠার ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। প্রথম সংস্করণের মলাট এঁকেছিলেন শম্ভু সাহা। [পূর্বসুরী রবীন্দ্রনাথ আজীবন সোচ্চারে নিজেই নিজের বই প্রকাশে অকুন্ঠ ছিলেন, জীবনানন্দও যেন গুরুদক্ষিণা দিয়ে সেই প্রথা মতোই সগৌরবে শুরু করলেন।] ১৯৪৪-এ তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘মহাপৃথিবী’তে প্রথম কবিতা সেই ‘বনলতা সেন’ সহ ঐ ১২টি কবিতাই অন্তর্ভুক্ত হলো। এরপর ১৯৫২ সালে সিগনেট প্রেস থেকে ৪৯ পৃষ্ঠার বইয়ে আরো ১৮টি কবিতা জুড়ে মোট ৩০টি কবিতা নিয়ে ‘বনলতা সেন’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পেলো, যার মলাট আঁকলেন সত্যজিৎ রায়। এই বইটিই আমার দাদার ঐ ‘বনলতা সেন’ আবৃত্তিতে প্রথম পুরষ্কারস্বরূপ পঁয়ত্রিশ বাই চার কলেজঘাট রোডে এসে পৌঁছলো। আমার ছ’মাত্রার মস্তিষ্ক সেই মলাটের ছবি দেখে চমকে উঠলো - শ্রাবস্তীর কারুকার্য মানে অজস্র বলিরেখা সমাবেশ নাকি? - সব্বোনাশ! অর্থাৎ, বাকি দুই সেনের তুলনায় ইনি যথেষ্ট অসুন্দরী। এম্যা! বিকর্ষণ বাড়লো। দুর্বোধ্যতাও।
‘বনলতা সেন’-এর সিগনেট প্রেস সংস্করণ। প্রচ্ছদ অলঙ্করণঃ সত্যজিৎ রায়।
তাও বইটি পড়ে ফেললাম। কবিতাটি তো দাদার আবৃত্তি তালিমের দৌলতে আমারও মুখস্থ ততোদিনে। স্বরলিপি সমেত। তবু পড়লাম। বারবার। সম্ভবত ‘বনলতা সেন’ নাম্নী সেই গভীর সামুদ্রিক রহস্যের আকর্ষণেই। নাকি কবিতাটির শরীরব্যাপী বিষণ্ণ নির্জন কুয়াশাময় রাস্তায় ভ্রমণের আচ্ছন্নতাই আমাকে গ্রাস করলো? হাজার বছর ধরে পথ হাঁটছেন যে পরিব্রাজক - তাঁর প্রতিও জন্ম নিচ্ছে অকৃত্রিম মুগ্ধমগ্নতা - সেই যেমন অতিবাল্যে বাহাত্তর ঘন্টা সাইকেলচালক সূর্যদার প্রতি ছিলো। এখন আর শ্রাবস্তীর কারুকাজে বলিরেখা চোখে পড়ে না - মসৃণতার সূক্ষ্ম কারুকাজ বুঝিয়ে দিয়েছেন আমার প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সুমিত্রা সেনের গান। কবিতাটি এখনও পড়ি। সময়ে-অসময়ে, উচ্ছ্বাসে-অবসাদে, ক্রোধে-নিবেদনে, ভীড়ে-একাকীত্বে, প্রেরণায়-ক্লান্তিতে - যখন তখন, এমনি এমনিও।
আস্তে আস্তে যতো বড়ো হচ্ছি, কবিতার শরীরের অন্দরে, প্রতি পংক্তির অন্দরে, শব্দের অন্দরে, দুই অক্ষরের মাঝখানের চিলতে শূন্যতার ভিতরে প্রবেশের দুর্দম নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি। কলেজে আমার পাঠ্যবিষয় ছিলো ‘আর্কিটেকচার’ - সেই সূত্রে শিল্পের ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম - গত শতাব্দীর গোড়ায় ফ্রান্সে ইম্প্রেশনিজমের বিরুদ্ধে একসাথে ফ্রন্ট গড়ে যুদ্ধে নেমেছিলো চার মহারথী - ফবিজম, ফিউচারিজম, কিউবিজম আর এক্সপ্রেশনিজম। প্রথম জনের হাতের অস্ত্র রঙ, দ্বিতীয়র গতি, তৃতীয় জনের অস্ত্র শৈলী, আর এক্সপ্রেশনিস্টদের অস্ত্র অতিরঞ্জন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে ‘দাদাবাদ’ আন্দোলন শুরু হয়। ‘দাদা’ ফরাসি শব্দ, অর্থ ‘কাঠের খেলনা ঘোড়া’। প্যারিসে এই ঘোড়া এনেছিলেন ত্রিস্তান জারা। বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প ও সাহিত্যের প্রচলিত সব রীতি, বিষয় ও ভাবনাকে ব্যঙ্গবিদ্রুপে অভ্যস্ত দাদাবাদীরা বুর্জোয়া সমাজ ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে ও সনাতন সবকিছুকে ভেঙেচুরে মানবিক প্রবৃত্তি ও অবচেতন মনের সার্বিক প্রকাশে বিশ্বাসী। ১৯২২ সালে আন্দ্রে ব্রেঁত ও আরাগঁর নেতৃত্বে কয়েকজন ফরাসি লেখকের হাতে এই দাদাবাদ হটিয়ে 'সুররিয়ালিজম' বা 'অধিবাস্তববাদ' প্রতিষ্ঠা পেলো। এবং ফরাসী সুররিয়ালিজমের সুনির্দিষ্ট রূপ দাঁড়ালো এইরকম - Pure psychic automatism by means of which it is proposed to express, either verbally, in writing, or in any other ways, the real process of thought - in the absence of all control exercised by reason and outside all aesthetic or moral considerations.
সুররিয়ালিজমের জন্ম ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানের গর্ভে। সাহিত্য, শিল্প, স্থাপত্য সহ শিল্পের সব মাধ্যমেই বাস্তবের চেয়েও অবচেতনের অবাধ অগ্রাধিকার। যুক্তি থাকলেও আবেগই সুররিয়ালিস্টদের প্রতীক ও চিত্রকল্পের যোগসূত্র। অনুষঙ্গ ও ইঙ্গিতের সাহায্যে কথা নির্মাণ করেন সুররিয়ালিস্ট কবি। ম্যাক্স আর্নেস্টের মতে, "সুররিয়ালিস্টের লক্ষ্য অবচেতনাকে বাস্তব প্রমাণ করা নয় অথবা অবচেতনার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে সম্পূর্ণ অবাস্তব কল্পনার একটি পৃথক জগৎ সৃষ্টিও নয়। বরং তার লক্ষ্য চেতন ও অবচেতন, বহির্জগত ও অন্তর্জগতের মধ্যে সমস্ত দৈহিক ও মানসিক পাঁচিল ভেঙে পাট করে দেওয়া।" ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’ ...একটু অন্যরকম ভঙ্গিতে কবি গিয়ম আপলোনিয়র ব্যাখ্যা দিলেন - ‘‘যুক্তির অনুশাসনের বাইরে মানুষের মনে যে এক মগ্নচৈতন্যের অতিবাস্তব জগৎ আছে, সেখানে ডুব দিয়ে তার অতলস্পর্শী রহস্যকে উন্মোচন করাই সুররিয়ালিজমের কাজ।’’ সাহিত্যের অভিধান সুররিয়ালিজমের সংজ্ঞা লিখলো: A movement in the 20th century literature and art which attempts to express and exhibit the workings of the sub-conscious mind especially as manifested in dreams and uncontrolled by reason or any conscious prices, characterized by the incongruous and startling arrangement and presentation of subject matter.
বাঙলা সাহিত্যে মঙ্গলকাব্য পদাবলীপর্ব পেরিয়ে মাইকেল বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা সাহিত্য ঋদ্ধিশিখরে পৌঁছনোর পর রবীন্দ্রোত্তর কল্লোলকালে একদল কবি ইউরোপীয় মুগ্ধতায় পাখা মেলে উড়তে উদ্যত হলেন, অন্যদল আঁকড়ে ধরে পড়ে রইলেন সনাতন শিকড়বাকড়। জীবনানন্দ হাঁটলেন এই দুইয়ের মাঝখান দিয়ে - জল আর স্থলের মাঝখান দিয়ে - ‘সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে’-র বিস্তীর্ণ তটভূমি ধরে একটানা - একদিকে গভীর সমুদ্রে হালভাঙা জাহাজের দিশেহারা নাবিকের সহসা সবুজ ঘাসের দারুচিনি দ্বীপে উদ্ধারলাভের অনুভূতি, অন্যদিকে যেন হারানো বাংলার প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রত্নসম্পদকেই চিত্রকল্পের বর্ণনায় ফিরিয়ে আনতে চাইলেন কবিতায় - ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা/ মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য...’ স্বতঃস্ফূর্ত আধুনিকতা থেকে উত্তর আধুনিকতায়। এডগার এলান পো-র ‘হেলেন টু’ আমি পড়িনি। অনেকে বনলতা সেন কবিতার নির্মাণের পিছনে ঐ কবিতার প্রেরণা বা আশকারার কথা বলেন। হতে পারে। নাও হতে পারে। হলেও ‘বনলতা সেন’-এর একটুও অমর্যাদা হয় না।
‘বনলতা সেন’ কবিতার ব্যাখ্যা নিয়ে কবির জীবদ্দশাতেই প্রচুর ধোঁয়াশার চর্চা হয়েছে। একদল তাঁর কবিতাকে বিশুদ্ধ ইয়ার্কি বলেছেন, আর একদল ছাঁচের মধ্যে ফেলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে তাঁর কবিতার সম্পদ শুধু তার চিত্ররূপকল্প। তাঁর কবিতা নিয়ে অভিযোগ - এতে কোনো দর্শন নেই, কেবল রূপক আর উপমার ছটা - ‘‘পৌষের চন্দ্রালোকিত মধ্যরাত্রির মতো তার কাব্য কুহেলি কুহকে আচ্ছন্ন’’ - কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, জীবনানন্দ নিয়ে গবেষণা হয়েছে, তাঁর কবিতার প্রতিটি শব্দ আর বাক্যের ভেতরে নতুন নতুন নিগুঢ় ইঙ্গিত খুঁজে বের করছেন গবেষকরা।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় এক পথিকের হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ পরিক্রমার সাধারণ সরল ব্যাখ্যা ছিলো - হাজার বছর ধরে এক প্রেমিক তার প্রেমিকাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আঠেরো পংক্তির এই অক্ষরবৃত্ত ছন্দের কবিতার চতুর্থ পংক্তির শেষেই কবি বলছেন - ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক’। প্রেমের পথে হেঁটে এতো দ্রুত ক্লান্ত হবে কেন প্রেমিক? তাই ব্যাখ্যার বদল হলো - না, ইনি কোনো পাতি হাফসোল খাওয়া প্রেমিকটেমিক নয়, বরং জন্ম-জন্মান্তর ধরে ঘুরে বেড়ানো এক ক্লান্ত মানুষ। জনৈক মানুষ নাকি গোটা মানবসত্ত্বা, মানবসভ্যতা? হাজার হাজার বছর ধরে এই মৃত্যুহীন মানবসত্ত্বার অভিজ্ঞতা বুকে নিয়ে কবি তাঁর নিজস্ব চেতনায় সভ্যতার নানান উত্থান আর পতনের মাঝখানের তটভূমি বরাবর হেঁটে হেঁটে পৃথিবীর বুকে শান্তির ঠিকানা সন্ধান করছেন। সেই হাজার বছরের ক্লান্ত নিশীথ যাত্রায় সিংহল সমুদ্র আর মালয় সাগরের অনুসঙ্গ দূরত্বের দৈর্ঘ্য বোঝাতে নিছক প্রতীকী। কিন্তু ভূগোল মতে সিংহল সমুদ্র কিংবা মালয় সাগর বলে কোনো সাগর কিংবা উপসাগরের অস্তিত্ব মানচিত্রে নেই। তবে সিংহল নামে একটি দ্বীপ আর মালয় উপদ্বীপের অস্তিত্ব আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো - কেন সিংহল আর মালয়? ‘বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে’ বা ‘আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে’-র সঙ্গে এই দুটি অঞ্চলের যোগসূত্র কী? বৌদ্ধযুগীয় দর্শন? প্রবল বুদ্ধবিরোধী বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রু সিংহাসন দখল করেই বাবা বিম্বিসারকে কারাগারের অন্ধকারে বন্দী করেছিলেন। সেখানে অনাহারে মারা যান বিম্বিসার। অন্যদিকে নিজের লোভ উচ্চাশা আর লালসার বশবর্তী হয়ে অশোক যুদ্ধ বাধিয়েছিলেন। কিন্তু কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে প্রায়শ্চিত্তাভিলাসী অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। তাই একদিকে পাপের শিকার বিম্বিসার অন্যদিকে অনুতপ্ত পাপী অশোককে দিয়ে এই দ্বিপাক্ষিক পাপের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন কবি তার কবিতায়। বনলতা সেন কবিতার ব্যাখ্যায় এই দুই রাজার নাম তাই শুধুমাত্র প্রাচীনযুগের নিদর্শন নয়। এর গভীরে যে পাপবোধ আর গ্লানির ইতিহাস চাপা পড়ে আছে, সেই সূত্রে বৌদ্ধযুগের একটা চুপ-আবহ ছড়িয়ে রয়েছে কবিতা জুড়ে। যে আবহে সিংহল আর মালয় শুধুমাত্র দুটি অঞ্চল বা সমুদ্রের নাম নয় - সেই বৌদ্ধিক সময়ের প্রতিনিধিও বটে।
অর্থাৎ এই কবিতায় বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব স্পষ্ট। গোটা কবিতায় পাঁচবার ‘অন্ধকার’ শব্দ প্রয়োগ করেছেন কবি, আরো একাধিকবার অন্ধকারের ইঙ্গিত দিয়েছেন ‘ধূসর জগৎ’ বা ‘পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে...’ বলে। বনলতার সাথে কবির দেখাও হয়েছে অন্ধকারেই। এ অন্ধকার নিজেকে না চেনার অসহায়তার, সার্বিক অজ্ঞতার, পাপের অন্ধকার। নির্বাণ বা মুক্তিলাভ বিনা এ অন্ধকার থেকে উত্তরণের আশা নেই।
একটু একটু করে অন্ধকার থেকে আলোয় মুক্তি ঘটছে এ কবিতার মগ্ন পাঠকের। সাত দু’গুণে চোদ্দর চার অবধি পৌঁছে এবার হাতে পেন্সিল। জংশন স্টেশনের রাজপথ পেরিয়ে এবার জিজ্ঞাসা চিহ্নেরা এসে দাঁড়ালো একটা ছোটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে। ‘নাটোর’। ‘আমারে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন’... নাটোর কেন? নাটোরই কেন?
‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ বইয়ের ‘লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের অর্থনীতি’ প্রবন্ধে ও ওপার বাঙলার এক বিশিষ্ট আমলা আকবর আলি খান জানাচ্ছেন -
‘‘প্রশাসকদের দলির দস্তাবেজ হতে দেখা যায় যে, এ শতাব্দীর প্রথম দিকে নাটোর শুধু কাঁচাগোল্লা বা জমিদারদের জন্য বিখ্যাত ছিল না, নাটোর ছিল উত্তরবঙ্গের রূপজীবীদের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র’’। ‘নাটোর’ শব্দটি বনলতা সেনের পেশা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিচ্ছে? সেন পদবী ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সে ভদ্রবংশ উদ্ভূত। সে যদি পূর্বপ্রেমিকা হতো, তবে কি ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ বলতো, নাকি ‘কোথায় ছিলে’ বলতো? কবি কিন্তু ‘বলেছে সে’ লিখছেন, ‘তিনি’ নয়। চিরকালীন নয়, ‘দু’দণ্ড শান্তি’র অনুসঙ্গটা পরিষ্কার হলো।
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা/ মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য’... এই বিদিশা ও শ্রাবস্তীর সাথেও কিন্তু সরাসরি বৌদ্ধযোগ। বিদিশার নিশা কি শুধুই বনলতার চুলের সৌন্দর্যের সুররিয়ালিস্ট উপমা? নাকি এরও গুঢ় অর্থ রয়েছে? কালিদাসের মেঘদূত কাব্যে এর উত্তর আছে। ‘মেঘদূত’ অনুযায়ী বিদিশা নগরী প্রাচীন ভারতে পেশাদার পতিতাদের আশ্রয়স্থল। তাহলে বিদিশা-নাটোর নাটোর-বিদিশা... সেই পাপের ত্রিপাক্ষিক দর্শন?
বনলতা সেনের এই পরিচয় কবিতাটিকে একটি সম্পূর্ণ নতুন দ্যোতনা দেয়। আমরা ‘দু’দণ্ডের শান্তি’-র যথাযোগ্য ব্যাখ্যা এবারে পাই। বুঝতে পারি কেন কবির অভিসার ‘নিশীথের অন্ধকারে’ এবং ‘আরো দূর অন্ধকারে’ - অন্ধকার থেকে অন্ধকার পরিক্রমার কারণ। এবং এই পরিচয় অনুযায়ী আমরা ভাবতেই পারি যে বনলতা সেনের এ পেশা তার স্বেচ্ছাগৃহীত নয়, তার এক ঝঞ্ঝাময় বর্ণনাতীত অসহায় নিঃসঙ্গ অতীত আছে - ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ সেই বিপর্যস্ত নারীর আর্তনাদ। কোনো গদগদ প্রেম বা সৌজন্যমূলক প্রশ্ন নয়। এই তিনটি শব্দের সমাহারে কোনো বিলাসখানি টোড়ি নেই, আছে মর্মান্তিক এক চীৎকার। আমার কাছে এখনও রহস্য - বনলতার এই উক্তিটি কি ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ নাকি ‘এতদিন কোথায় ছিলে’ - কী বলেছিল বনলতা? পাখির নীড় সুন্দর কি অসুন্দর - এ প্রশ্ন অমূলক। পাখির নীড় আজীবন না সাময়িক? কিন্তু যাই হোক, পাখির কাছে তার নীড় ক্লান্ত দিনশেষের নিঃশর্ত আশ্রয়, যেখানে সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যায় আরামের রূপকথায়। বনলতা সেনের সেই নৈসর্গিক আশ্রয়-দৃষ্টিতে এসে হাজার বছরের পরিক্রমার ক্লান্তি ক্লেদ থেকে যেন আরোগ্যপ্রাপ্তি ঘটছে কবির।
বনলতা - এই নামটা বাঙলায় খুব ব্যবহৃত নারীনাম নয়। শ্যামলী, সুচেতনা, সুদর্শনা, সুরঞ্জনা, সরোজিনী, শেফালিকা বোস, সুজাতা, অমিতা সেনের মতো। এমনকি অনুপম ত্রিবেদীর মতো পুরুষ সহ বনলতা সেনও জীবনানন্দের কবিতার একটি চরিত্রমাত্র - এই নামগুলো কি নিছকই নাম? জীবনানন্দ তাঁর ‘কবিতার কথা’ বইয়ের মধ্যে একটা প্রবন্ধে বলছেন - ‘‘কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার। কবিতার অস্থির ভেতরে থাকবে ইতিহাস চেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান।’’ ‘সুচেতনা’ কবিতার প্রথম স্তবকেই একটি দ্বিস্তরিক চিন্তা ও চেতনার প্রকাশ -
‘‘সুচেতনা তুমি এক দূরতর দ্বীপ
বিকেলের নক্ষত্রের কাছে;
সেইখানে দারুচিনি বনানীর ফাঁকে
নির্জনতা আছে।
এই পৃথিবীর রণরক্ত সফলতা সত্য, তবু শেষ সত্য নয়
কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে
তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়।’’
কবিতায় শুধু এই অংশটি পাঠ করলে পাঠক একে এক নির্মম প্রেমের কবিতা হিসেবে ভাবলেও ভাবতে পারেন। কিন্তু তা নয়। সুচেতনা অর্থে আমরা যাকে প্রেমিকা ভাবছি, সে কোনো নামবাচক বিশেষ্যপদ নয় সে হলো বিশেষণ। সুচেতনার অর্থ এখানে শুভচেতনা। বনলতা শব্দের সহজ অর্থও তো ঘাস। প্রকৃতির সবচেয়ে অবহেলিত চিত্তাকর্ষক সৌন্দর্যের প্রতীক।
তৃতীয় স্তবকে কবি সমকালীন হলেন। এবং ফিরে এলেন ঘাসের কাছে। চিরন্তন নিসর্গের কাছে। ‘সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতোন সন্ধ্যা আসে’ - সেই ১৯৩৫-এ কবিতাটি প্রকাশের পর থেকেই বাঙলা কাব্যসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রকল্পের পংক্তি হিসেবে স্বীকৃত। এক অভিনব স্তগতোক্তির মতো মৃদু উচ্চারণে বর্ণিত এমন শব্দিত চুপসসমৃদ্ধ সন্ধ্যার সঙ্গে মুখোমুখি আলাপ হলো। এর আগে রবীন্দ্রনাথের কলমে ‘দুঃসময়’ কবিতায় আর এক সন্ধ্যার সাথে আমাদের দেখা হয়েছে। সেখানেও এক বিহঙ্গের পাখা ছিলো, এখানেও দিনভর আকাশচারণ সেরে চিলের ডানা থেকে রোদের গন্ধ মুছে যাচ্ছে। ঘরে ফিরছে পাখি। নদী তার তরঙ্গিত সঞ্চলন শেষে শান্ত সমাহিত সমুদ্রের ঘরে ফেরে। ঘরে তো ফিরতেই হয় সবাইকে শেষমেশ। নিজস্ব চৌখুপিতে। তথাকথিত আলোকিত সমাজ নির্দেশিত সংসারে। কর্তব্যে। কর্মে। দায়ে দায়িত্বে। প্রিয়সঙ্গ সেরে অবসন্ন কবিও তাঁর ডানার রোদের গন্ধ মুছে ফিরলেন ঘরে। পৃথিবীর সব আলো নিভে যাচ্ছে, আর অন্ধকারে কেবল জোনাকিঅক্ষরে জীবনকাহিনীর পাণ্ডুলিপি লিখতে বসছে মহাকাল। সব জাগতিক লেনদেন শেষে ফের নির্জন অন্ধকারে আবার একা একা বনলতা সেনের মুখোমুখি বসছেন কবি। নিভৃতে। নিদ্রায়। গোটা কবিতায় তিনবার উপর্যুপর বনলতা সেনের নাম উচ্চারিত - তার মধ্যে প্রথম দু'বারেই সে ‘নাটোরের বনলতা সেন’। তৃতীয় ও শেষবারে নাটোরের উল্লেখ নেই। কেন? কারণ, এখন বনলতা তার নিজস্ব নাটোরে নয়, এখন সে কবির নির্জন ঘরের মধ্যে - কবির বোধের মধ্যে, চেতনার মধ্যে কবির একান্ত মুখোমুখি। অন্ধকার জীবনসন্ধ্যায় কে কার মুখোমুখি বসলেন? কবি নাকি সেই মৃত্যুহীন মানবসত্ত্বা? বনলতা কি নারী, নাকি সুচেতনার মতো আক্ষরিক অর্থেই অনন্ত নিসর্গ প্রকৃতি?
কারণ কবি জীবনানন্দের আকুল আকাঙ্খা তো এমনই -
‘‘ঘাসের ভিতর ঘাস হয়ে জন্মাই কোনো এক নিবিড় ঘাস-মাতার
শরীরের সুস্বাদু অন্ধকার থেকে নেমে’’
বনলতা সেন যে সুন্দরী, সে সম্পর্কে বাঙলা কবিতার জীবনানন্দ প্রেমী ও বিদ্বেষী নির্বিশেষে কোনো পাঠকই দ্বিমত প্রকাশে ইচ্ছুক নন। যদিও তার রূপ সম্পর্কে কোথাও কোনো ধুন্ধুমার আতিশয্যের সন্ধান পাই না আমরা। এক অসীম রহস্যময় সৌন্দর্যের প্রতি নিবিড় বিস্ময়ে বাঙলা কবিতার পাঠক মগ্ন চেয়ে বসে থাকে। যে রহস্যময়তা একমাত্র তুলনীয় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির 'মোনালিসা' ছবির সঙ্গে, যেখানে হাস্যময়ী নারীমুখের মধ্যেই দুঃখকরুণ অভিব্যক্তির রহস্য নিয়ে বিতর্ক শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলছে। চলবেও। বনলতা সেনের ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’, পাখির নীড়ের মতো চোখ, বিদিশার নিশাচুল আর শ্রাবস্তীর কারুকার্যখচিত মুখ নিয়েও গবেষণা চলতেই থাকবে।
‘কবিতা ভবন’ থেকে প্রকাশিত ‘বনলতা সেন’-এর প্রথম সংস্করণ। প্রচ্ছদ অলঙ্করণঃ শম্ভু সাহা।
বনলতা সেন কবিতাটি সর্বার্থেই রবীন্দ্রোত্তর বাঙলা কবিতার নতুন যুগদিশারী, কারণ, কল্লোলযুগের পাঁচ জন কবি রবীন্দ্রপ্রভাব কাটাতে যে আধুনিকতার সন্ধানে বেরিয়েছিলেন, এ কবিতা তাদের যোগ্যতম প্রতিনিধি। এর মধ্যে কোথাও কোনো বিদ্রোহ নেই, সদম্ভ উচ্চারণ নেই, সোচ্চার হিমালয় অতিক্রমণের বা যুদ্ধজয়ের ঘোষণা নেই। কবিতাটির বুনোট অত্যন্ত নিবিড়, রোমান্টিকতার মোড়কে কবি মানবসভ্যতার ঐতিহাসিক পরিভ্রমণের ও গন্তব্যের ঠিকানা দিয়েছেন আঠেরো পংক্তিতে। পাঠে মনোরম, শব্দচয়নে ঐতিহ্যনির্ভর, ভাবে মিলনোন্মুখ। হাজার বছরের অবিরাম সন্ধান শেষে বনলতা বা প্রকৃতির কাছেই মানব সভ্যতার সপ্রেম আত্মসমর্পণের শ্বাশ্বত বার্তাবহ।
আমার ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি পাঠের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ পেরিয়ে এসে একথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, জীবনানন্দের অন্য অনেক কবিতার চেয়ে এই কবিতাটি পল্ গগ্যাঁ বা সালভাদর দালির ছবির মতো বহুমাত্রিক শব্দ রঙ ঘ্রাণ ও স্পর্শযোগ্য এক অতীন্দ্রিয় জাগতিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। সুররিয়ালিস্টিক শিল্পরীতির চূড়ান্ত প্রকাশ থাকলেও তার শিকড়ে আছে কবির গভীর আত্মনিবেদিত এক মহাজাগতিক বিস্ময়বোধ। এ বিস্ময়বোধের জন্যে কবি বার বার শান্তি খুঁজতে ছুটেছেন বোধের মগ্ন চৈতন্যের গভীরে, বাস্তব থেকে অতিবাস্তবে।
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার প্রাণ। বারবার। ইচ্ছে করে ‘এই ঘাসের ঘ্রাণ হরিৎ মদের মত গেলাসে গেলাসে পান করি’।