আরেক রকম ● দশম বর্ষ অষ্টাদশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ● ১-১৫ আশ্বিন, ১৪২৯

প্রবন্ধ

অভিজিৎ সেনঃ অতুলনীয় অর্থনীতিবিদ

অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়




নব্বইয়ের দশকের শুরুতে জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সেন্টার ফর ইকোনমিক স্টাডিজ অ্যাণ্ড প্ল্যানিং বা অর্থনীতির বিভাগে প্রায় চাঁদের হাট বসেছিল বলা যায়। ভারতবর্ষে সদ্য অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তীক্ষ্ণ বিতর্কের আবহাওয়া, কেইনস-কালেস্কি-মার্ক্সের তত্ত্বের কাঠামোয় বিশ্বাসী এক দল অধ্যাপক-অধ্যাপিকা (প্রত্যেকেই নামকরা অর্থনীতিবিদ) এক জোরদার তাত্ত্বিক লড়াই দিয়ে চলেছেন মূলধারার সরকারী আনুকূল্যপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদদের সাথে। নব্য উদারবাদী অর্থনৈতিক মডেলের বিকল্প খোঁজার তাগিদে সেই লড়াই।

এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বর্ণময় চরিত্র ছিলেন অভিজিৎ সেন। কখনই না কাটার ফলে ঘাড় বেয়ে নামা চুলের রাশি আর বুক-পেরনো দাড়ির সমাহারে দীর্ঘদেহী শালপ্রাংশু অভিজিৎ সেনকে দৃষ্টিগোচর করতে অক্ষম - এই রকম ছাত্রছাত্রী পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। চেহারায় আলাদা হওয়ার কারণে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক উৎসুক ভাব জাগাটা অস্বাভাবিকও ছিল না। সেন্টারের অলিন্দে অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের নিয়ে সত্য, অর্ধসত্য, মিথ সব কিছু মিশিয়ে যত গল্প ঘুরে বেড়াত তার বেশীর ভাগই অভিজিৎ সেনকে নিয়ে ছিল।

প্রথম সেমেস্টারে অভিজিৎ সেন পড়াতে এলেন পরিসংখ্যানবিদ্যা। তখনই জানতে পারলাম যে যখনই কোন ফ্যাকাল্টি সদস্য পোস্ট-ডক্টরাল বা অন্য কোন পড়াশোনার কাজে দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বাইরে যান তখন সেই অধ্যাপক বা অধ্যাপিকার জন্যে ধার্য বিষয়টি পড়ানোর দায়িত্ত্ব এসে পড়ে ওনার ওপরে। আর এমনটা নয় যে অধ্যাপক সেনকে এর জন্যে কোন সাধ্যসাধনা করতে হত, বরং কেউ না থাকলে তার বিষয়টি উনিই পড়িয়ে দেবেন - এটা তখন প্রায় স্বতঃসিদ্ধ ছিল।

আমরা বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীরা মজা করেই বলতাম যে অভিজিৎ সেনকে অর্থনীতির যে কোন বিষয় দিয়ে দেওয়া হোক, উনি ঠিক পড়িয়ে দেবেন। কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়া উনি কিছু ক্লাস নিতে আসবেন (যেটা একমাত্র ওনার পক্ষেই সম্ভব, আমাদের আগের সময়ে কখনও উনি মাইক্রোইকোনমিকস পড়াতেন, একবার ক্লাসে ঢুকে বোর্ডে কিছু একটা লিখে “নাঃ, ঠিক হচ্ছে না আজকে, পরের ক্লাসে দেখা হবে” বলে বেরিয়ে গেছিলেন)। কিছু ক্লাসে পড়াতে পড়াতে উনি নিজেই দৃশ্যত মানসিক ভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, কিন্তু কিছু না হলেও প্রায় গোটা দশেক লেকচার উনি দিতে আসবেন উৎসাহে ফুটতে ফুটতে। আর যেদিন অভিজিৎ সেন উৎসাহ নিয়ে পড়াবেন সেদিন ছাত্রছাত্রীদের অভিজ্ঞতা হবে প্রায় অনির্বচনীয়, তার কারণ উনি এমন সব প্রশ্ন তুলবেন আর সবার সাথে সেগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন - সেই সব প্রশ্ন অন্য কোন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা করবেন না সচরাচর।

যদিও মজা করেই বলা হত, এটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য ছিল। এটা আমরা বুঝেছিলাম যখন উনি আমাদের পড়াতে এলেন, অনেকের মতই আমিও আশ্চর্য হয়েছিলাম যখন দেখলাম পরিসংখ্যানবিদ্যা পড়াতে এসে উনি প্রোব্যাবিলিটি ইত্যাদির সংজ্ঞা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিতই নয়। কেউ একজন জিজ্ঞাসা করাতে শুরুর দিকেই একবার বলেছিলেন যে এই সব বই থেকে পড়ে নিতে, ক্লাসঘরে অন্যভাবে শেখার আর চিন্তা করার দিকে যাওয়ার উপদেশও দিয়েছিলেন। অত্যন্ত অপ্রচলিত ভাবে পড়ানো প্রায় শুরুই হল রাশিয়ান গণিতবিদ চেবিশেভের অসাম্যের তত্ত্ব দিয়ে। সেই তত্ত্ব প্রমাণ করে যে, প্রায় সব ধরনের প্রোব্যাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশনে এক নির্দিষ্ট ভগ্নাংশের বেশী সাংখ্যিক মান গড় মানের কাছাকাছি যেতে পারে না। অন্যভাবে উদাহরণ দিয়ে বললে - যদি অনেক ব্যক্তির আয় ধরা হয় তাহলে গড় আয়ের কাছাকাছি শুধু কিছু মানুষের আয়ই থাকবে, যদি বাইরে থেকে কোন হস্তক্ষেপ না করা হয় তাহলে অনেক মানুষের আয় গড় আয়ের থেকে অনেকটা কমই থেকে যাবে।

তোতাপাখীর মত পাঠ্যপুস্তক থেকে মুখস্থ করে পড়াশোনা করে আসা আমাদের মত অনেক ছাত্রছাত্রীর কাছে এই রকম পড়ানো একেবারে নতুন আর অন্য রকম ছিল। বহু পরে বুঝেছি যে এক জন শিক্ষক হিসেবে উনি আমাদের কোন দিকে নিয়ে যেতে চাইছিলেন। যদি সরকার হস্তক্ষেপ না করে এবং আয় আর মুনাফার পুনর্বণ্টন না হয় তাহলে সমাজে আয়ের অসাম্য থাকতে বাধ্য - এই সহজ অথচ অপ্রচলিত সত্যের সম্মুখীন করাতে চাইছিলেন অভিজিৎ সেন ছাত্রছাত্রীদের। পরিসংখ্যানের তত্ত্বের মাধ্যমে উনি আমাদের অর্থনীতির অসাম্যের তত্ত্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাইছিলেন।

ঠিক এই জায়গাতেই অভিজিৎ সেনের উজ্জ্বল প্রতিভা তাঁকে সবার থেকে আলাদা করে দিত। বিষয় যাই হোক না কেন সেই বিষয়ের গভীরে গিয়ে অপ্রচলিত কিন্তু অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে প্রশ্ন তুলতেন আর তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতেন ছাত্রছাত্রীদের সাথে। বহু পরে যখন নগণ্য কিছু শিক্ষকতা করেছি তখন বুঝেছি অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে বছরের পর বছর এই কাজটা করা প্রায় অসম্ভব, কিন্তু অধ্যাপক অভিজিৎ সেন এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছনোর আর সেখানে পড়াশোনা করার এক আলাদা উত্তেজনা আর উৎসাহ থাকে নতুন ছাত্রছাত্রীদের। সেই উৎসাহে আমরা অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের পড়াশোনা, গবেষণা ইত্যাদি বিষয়ে যতটা সম্ভব জানার চেষ্টাও করতাম। তখনই জানতে পারা যায় যে অভিজিৎ সেন পদার্থবিদ্যার স্নাতক ছিলেন, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান এবং পরবর্তী কালে অর্থনীতিতে গবেষণা শুরু করেন। তাঁর পিএইচডি-র গবেষণার কাজ দুই ভাগে প্রকাশিত হয় 'কেম্ব্রিজ জার্নাল অফ ইকোনমিকস'-এ ১৯৮১ সালে, ভারতীয় কৃষিব্যবস্থার কাঠামো আর কৃষিতে শ্রমের নিয়ন্ত্রণের ওপর এই কাজ আজও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।

এর পরে অভিজিৎ সেন অক্সফোর্ড, সাসেক্স, এসেক্সের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। ১৯৮৫ সালে দেশে ফেরত এসে জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং অবসর নেওয়া পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন।

গবেষক অভিজিৎ সেন অধ্যাপক অভিজিৎ সেনের মতই সবার থেকে আলাদা ছিলেন। তাঁর তাত্ত্বিক বোঝাপড়া সর্বদাই পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করত। বাস্তব সত্যকে সর্বদাই পরিসংখ্যানের জটিলতার মধ্যে থেকে টেনে বার করে সেই সত্যকে সহজ সরল ভাবে তত্ত্বের কাঠামোয় নিয়ে আসার এক অনন্য ক্ষমতা ছিল তাঁর মধ্যে। এক ভাবে দেখতে গেলে, সবার ওপরে তথ্য ও পরিসংখ্যানকে পরম মর্যাদা দিতেন।

১৯৯১ পরবর্ত্তী সময়ে যখন অর্থনীতির বিতর্ক তুঙ্গে, তখনও কিন্তু অধ্যাপক সেন পরিসংখ্যানের এই মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। এই কারণে বেশীর ভাগ সময়ে দক্ষিণপন্থী অর্থনীতিবিদদের সাথে তার্কিক লড়াই তো হয়েছেই, এমন কি কিছু সময় সতীর্থ বাম অর্থনীতিবিদদের সাথেও চরম বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। অভিজিৎ সেন কিন্তু কখনই পরিসংখ্যানের অর্থাৎ বাস্তবের বাইরে গিয়ে তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করেননি। এর ফলে কোন সময়েই ওনাকে গতানুগতিক ডান-বাম বা মধ্যপন্থী এই রকম বিভাজনে ফেলে দেওয়াটা খানিকটা মুশকিলই ছিল। প্রচুর গবেষণা-ভিত্তিক প্রকাশনা আছে তাঁর নামে এমনটা নয়, কিন্তু যেখানে যা আছে সেখানে প্রকৃত তথ্য ও ঘোর বাস্তবের প্রতি তাঁর এই আনুগত্য দৃষ্টান্তমূলক।

তার মানে অবশ্যই এটাও নয় যে অভিজিৎ সেন কোন পক্ষ নিতেন না, বরং উল্টোটা হয়ে এসেছে চিরকাল। তিনি আজীবন সাধারণ মানুষের পক্ষে থেকেছেন, যে কোন বিতর্কে ওনার নিজের বিবেচনায় যা করলে মানুষের ভাল হতে পারে বলে মনে হয়েছে উনি চিরকাল সেই সব নীতির পক্ষে অনড় থেকেছেন। এই মানবিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বার বার সামনে এসেছে - বিশেষ করে যখন তিনি নীতি নির্ধারকের ভূমিকা পালন করেছেন ভারতীয় অর্থব্যবস্থায়।

যখন নীতি নির্ধারণ করার সুযোগ ও সময় এসেছে, তখন অভিজিৎ সেন নীতি নির্ধারক হিসেবেও তাঁর অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় রেখেছেন। কখনই সেই দায়িত্ত্ব পাশ কাটিয়ে যাননি। অন্য অনেক অর্থনীতিবিদের সাথে ওনার এই পার্থক্যটাও ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর মাঝে স্বতন্ত্র ভাবে থাকতে থাকতে অনেকেই সরকারী দায়িত্বের বোঝা নিজের ঘাড়ে নিতে চান না, কিন্তু অভিজিৎ সেন নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও পিছু-পা হননি কখনও।

কৃষিক্ষেত্রে খরচ ও মূল্য নির্ধারণ করার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, কংগ্রেস পরিচালিত সংযুক্ত মোর্চার দুটি সরকারের মেয়াদ থাকাকালীন প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য থেকেছেন, এরই মাঝে দীর্ঘমেয়াদী শস্য নীতি নির্ধারক উচ্চ স্তরের কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের এই কাজগুলি করার সময়ও তিনি কখনই অধ্যাপনা থেকে বিরতি নেননি। আমরা যখন এমফিল-এর ছাত্রছাত্রী তখন শনিবার আমাদের কৃষিবিদ্যার ক্লাস নিতেন কারণ তখন তিনি কৃষি কমিশনের চেয়ারম্যান। অধ্যাপনার প্রতি এই ভালবাসা সত্যিই খুবই বিরল। যেহেতু তখন কৃষিব্যবস্থার গভীরে গিয়ে কাজ করতেন অর্থনৈতিক তত্ত্বের সাথে বাস্তব অর্থব্যবস্থার এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন ঘটাতেন পড়াতে গিয়ে। তখন প্রতিটি শনিবারের জন্যে আমরা ছাত্রছাত্রীরা প্রায় মুখিয়ে থাকতাম।

নীতি নির্ধারক হিসেবে অন্তত দুটি ক্ষেত্রে অভিজিৎ সেনের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কৃষকদের জন্যে ন্যূনতম কৃষিমূল্য নির্ধারণ তার মধ্যে প্রথম। নব্য উদারবাদী নীতির প্রবর্তনের সাথে সাথে ভারতের কৃষকদের দুর্দশা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, চাষের কাজের খরচ অত্যধিক বেড়ে গেছে ভর্তুকি লাগাতার কমে যাওয়ার কারণে, এদিকে কৃষিপণ্যের দাম সেই ভাবে বাড়েনি, উপরন্তু কিছু কিছু বছরে কৃষকদের অনেক কম দামে শস্য বিক্রি করে দিতে হয়। ভারতের কৃষিব্যবস্থায় এ এক স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয়েছে - বিশেষ করে বিশ্বায়নের পর। এর ফলে শস্য বেচার সময় কৃষকদের ন্যূনতম দাম পাওয়াটা তাদের বেঁচে থাকার এবং চাষের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীতির স্তরে কৃষকদের ন্যায্য দাম দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিজিৎ সেনের অবদান অনস্বীকার্য।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল জনসাধারণের জন্য সর্বজনীন খাদ্যবণ্টন ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করার জন্যে তাঁর জীবনভোর তীব্র লড়াই। ভারতবর্ষে বড় সংখ্যার মানুষের কাছে রোজকার খাবার জোগাড় করাটাই জীবনের মূল সমস্যা। পরিসংখ্যান আর তথ্যের মাধ্যমে অভিজিৎ সেন এটা বুঝেছিলেন, আর বুঝেছিলেন বলেই চিরকাল সর্বজনীন খাদ্যবণ্টন ব্যবস্থার স্বপক্ষে জোরদার সওয়াল-জবাব করে গেছেন। গণবণ্টন ব্যবস্থা সর্বজনীন না করার পেছনে সরকারী অলিন্দের কায়েমী স্বার্থরাই দায়ী, কিন্তু এখনও যে একটা বড় সংখ্যার মানুষ কম দামে খাদ্যশস্য পাচ্ছে গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে তার পেছনে নীতি নির্ধারক হিসেবে অভিজিৎ সেনের মত মানুষদের লড়াইয়ের এক বিরাট অবদান রয়েছে।

অধ্যাপক, গবেষক, নীতি নির্ধারক অভিজিৎ সেন মানুষ হিসেবেও খুবই বড় মাপের ছিলেন, এটা না বললে বোধ হয় পুরোটা বলা হয় না। সাফল্য তাঁর উদার সরল মনকে কখনই ছুঁতে পারেনি, আদতে অত্যন্ত ভাল এবং বিরল এক জন মানুষ ছিলেন, চিরকাল সেই রকমই রয়ে গেছেন। আমরা ছাত্রছাত্রীরা নানা রকম তর্ক করেছি ওঁর সাথে - অনেক সময় না বুঝেই। কিন্তু সেই নিয়ে কোন দিন বিরূপ ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয়নি। অধ্যাপনার ক্ষেত্রে এই রকম ব্যক্তিগত গণতান্ত্রিক চেতনাও খুবই বিরল।

এক আলোচনা সভায় কোন এক বিষয়ের ওপর বলতে গিয়ে উনি এক বার বলেন যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তেলের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তা অদূর ভবিষ্যতে আর কমবে না। এর ঠিক মাস ছয়েকের মধ্যেই তেলের দাম হুড়মুড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করে। তখন ওঁকে সেই মন্তব্য মনে করিয়েছিলাম, ওঁর জবাব ছিল - “তোমরা আমাকে বিরুদ্ধাচারণ করার জন্যে বিতর্ক সভায় ডেকেছিলে, আমি করেছি, আমার কি দোষ?” এই বলে স্বকীয় দুষ্টুমি ভরা হাসিটা হেসে চলে যান উনি। গভীর জ্ঞান, অতুলনীয় প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও, এত কৃতী এক জন মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এই মানসিক সারল্য চিরকাল ধরে রাখাটা প্রায় আর একটা বিশাল কীর্তির সমান। আর এক জন অভিজিৎ সেনকে আমরা বোধ হয় পাব না।