আরেক রকম ● দশম বর্ষ চতুর্দশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ জুলাই, ২০২২ ● ১-১৫ শ্রাবণ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

আমায় ডুবাইলি রে, আমায় ভাসাইলি রে

অনিন্দিতা রায় সাহা


দ্বীপের নাম ভাসান চর। ভৌগোলিক অবস্থান তার চট্টগ্রামের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায়। বাংলাদেশের আটটি প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম। একদিকে তার দীর্ঘ তটভূমি, সুন্দরী কক্স বাজার, অন্যদিকে বিস্তীর্ণ পার্বত্য প্রদেশ। আর তারই সঙ্গে রয়েছে চট্টগ্রামের বুকে অসংখ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিসংখ্যান। সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের করাল ছাপ পড়ছে এই অঞ্চলে ঘন ঘন। সাম্প্রতিককালে মাত্র তিন বছরে (২০১৭-২০২০) এখানে বন্যা হয়েছে ছয়-বার, ঝড়-ঝঞ্ঝা চার-বার, যার মধ্যে রয়েছে আমফানের মতো সুপার সাইক্লোন, আর পার্বত্য ধ্বস নেমেছে চার-বার (IDMC, 2021)।

নোয়াখালী, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার ইত্যাদি মিলিয়ে চট্টগ্রামে এগারোটি জেলা। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি দ্বীপ- নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, জাহাঙ্গীর চর, ভাসান চর। দক্ষিণ প্রদেশের এই জায়গাগুলিতে বাস করে বহু প্রান্তিক মানুষ, যাদের নিত্য বাস প্রকৃতির রোষের সঙ্গে, প্রায়শই ঝড়-ঝঞ্ঝা, ক্রমাগত সমুদ্রের জলস্তরের বেড়ে ওঠা, আর ধীরে ধীরে ডুবতে থাকা। মেঘনা নদীর চরের অবক্ষয় এখানকার সংকট আরো বাড়িয়ে তুলছে। এখানে বসবাসকারী মানুষেরা লড়াই করে বেঁচে আছেন একদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন আর পরিবেশগত সমস্যার সঙ্গে, অন্যদিকে দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা নিয়ে। স্বাভাবিক সময়েই এখানে জীবিকা ও জীবনের সংগ্রাম, দুর্যোগের সময়ে তার চেহারা একেবারে প্রাথমিক, খাদ্য আর বাসস্থানের। ২০১৬ সালে রোয়ানু আর ২০১৭ সালে মোরা সাইক্লোন আছড়ে পড়ার পর থেকে এই অঞ্চলের বাসযোগ্য জমি বসে যেতে আরম্ভ করে। তারপর ধীরে ধীরে হাতিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ চাষজমি আর ঘরবাড়ি চলে গিয়েছে জলের তলায়। আর ভিটে ছেড়ে চলে গিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ঘরছাড়ার এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে সিদার সাইক্লোন হওয়ার সময়, আর সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে আইলা, বুলবুল হয়ে আমফান পর্যন্ত। এখানকার বাসিন্দারা চলে গেছে সন্দ্বীপ, লখিমপুর, রাঙামাটিতে। মেঘনার অববাহিকায়, হাতিয়া প্রণালীতে এই ঘরছাড়ার দলের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২০২০-তে প্রায় ১০,০০০-এ এসে পৌঁছেছে। স্থানান্তরিত আর বাস্তুচ্যুত এইসব মানুষের গল্প আজকের দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় সমস্যার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার জনগোষ্ঠীর আভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি (Internal Displacement) এবং দূরগামী পরিযান (Migration)।

জলবায়ু আর পরিবেশের সংকট সৃষ্টি করেছে যে নতুন ইহুদীদের, তাদের সঠিক পোশাকী নাম নেই, তবে সাধারণভাবে বলা হয় জলবায়ু-পরিযায়ী (Climate Migrant)। Intergovernmental Panel for Climate Change (IPCC)-এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়া এই জগৎব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী, যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহারা, খাদ্যহারা হয়ে চলেছে। আমরা নিয়ত চাক্ষুষ করছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়। পূর্বাভাস অনুযায়ী দূরদর্শনে প্রতি মুহূর্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেখতে আমরা অভ্যস্ত এখন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তুচ্যুতি (Climate Induced Displacement), জলবায়ু-পরিযান (Climate Migration), জলবায়ু-শরণার্থী (Climate Refugee) এই শব্দবন্ধগুলি উন্নয়নশীল দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখন আর অচেনা নয়। তবে এদের এলোমেলো ব্যবহার থেকে বেশ স্পষ্টই বোঝা যায় যে, এর অর্থ এবং ব্যাপ্তি এখনো আমাদের কাছে ঠিক স্বচ্ছ নয়।

গোড়াতেই বুঝে নেওয়া দরকার যে, জলবায়ুর পরিবর্তন দুই ধরণের প্রভাব তৈরী করতে পারে। চরম আবহাওয়ার দাপটে ঘটে থাকে নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ (extreme weather events), যেমন, ঘূর্ণিঝড়, প্লাবন ইত্যাদি। যদিও এইসব দুর্যোগের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, তবু এর প্রাথমিক অভিঘাত তাৎক্ষণিক। অন্যদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনে ধীরে ধীরে নিঃসাড়ে ঘটে চলে অনেক ঘটনা (slow onset events), যেমন সমুদ্রস্তরের বেড়ে ওঠা, উষ্ণায়ন, হিমবাহ গলে যাওয়া ইত্যাদি। দুই জাতীয় প্রভাবই মানুষকে স্থানচ্যূত করে, তার মেয়াদ কখনো স্বল্পকালীন, কখনো মধ্যকালীন, কখনো বা দীর্ঘকালীন। খুব বিধ্বংসী ঝড়বৃষ্টি না হলে মানুষ হয়তো কিছুদিন পরে আবার ঘর গড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু অনেক সময় জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রকোপ, সুনামী-আমফানের মতো ভারী বিপর্যয় অথবা ধীরগতি অবক্ষয়, মানুষকে স্থানচ্যূত করে চিরকালের মতো। পূর্বে উল্লিখিত হাতিয়া আর ভাসান চর এভাবেই লোকবসতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে, মানুষকে ঠাঁই নাড়া করছে বেশ কিছুকাল যাবৎ। বাস্তুচ্যুত মানুষ অনেক সময় দেশের মধ্যেই অন্যত্র চলে যায়, যাকে বলা হয় আভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি (Internal Displacement)। এর অভিমুখ হতে পারে গ্রাম থেকে শহরে, কিংবা এক রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে। আরো বড় অভিঘাত মানুষকে পাঠিয়ে দিতে পারে সীমানা পেরিয়ে দেশান্তরে, যার পোশাকি নাম আন্তঃসীমান্ত পরিযান (Transboundary Migration)। এমন সব মানুষদের সকলকে মিলেমিশে হরেক নামে ডাকা হয়, পরিযায়ী, উদ্বাস্তু, স্থানচ্যূত, গৃহহারা।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নাড়াচাড়া করলে সাদা চোখেই দেখা যায় জলবায়ু পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের আধিক্য ও পৌনঃপুনিকতা। এই ক্রমবর্ধমান বিপর্যয় ও ধীরগতি অবক্ষয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুতগতিতে। আভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (Internal Displacement Monitoring Centre বা IDMC) হিসেব অনুযায়ী ২০২০ সালে পৃথিবীর ১৪৯টি দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ নতুন করে আভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতির শিকার হয়েছেন। মনে রাখা দরকার যে, একই মানুষ বারে বারে গৃহ হারাতে পারেন, তাই স্থানচ্যুতর সংখ্যা হয়ে উঠতে পারে বিপুল। এই মোট সংখ্যার মধ্যে মাত্র ৯৮ লক্ষ মানুষ ঠাঁইনাড়া হয়েছেন সংঘর্ষ জনিত কারণে, আর অন্যদিকে ৩.০৭ কোটি মানুষ ঘর ছেড়েছেন জলবায়ু জনিত কারণে। আরো বিশদে দেখলে, জলবায়ু প্রভাবিত কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ১.৪৬ কোটি, প্লাবন ১.৪ কোটি, দাবানল ১২ লক্ষ, ধ্বস ১০.২ লক্ষ, তাপপ্রবাহ ৪৬ হাজার, ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত ৭ লক্ষ এবং খরা ৩২,০০০। নতুন এবং পুরোনো সব যোগ করলে ২০২০ সালের মোট স্থানচ্যুতের সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে পাঁচ কোটি। পৃথিবীর যে দেশগুলিতে জলবায়ু জনিত কারণে স্থানচ্যূত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে, সেগুলি হল চীন, ফিলিপিন্স, বাংলাদেশ আর ভারত। এই সংখ্যাগুলি মাথায় রাখলে বাংলাদেশের ভাসান চর আর নিকটবর্তী এলাকা নিয়ে ভাবনার কারণটা স্পষ্ট বোঝা যাবে।

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান হিসেব করলে দেখা যায় যে, বর্তমান সহস্রাব্দে সে দেশে জলবায়ু জনিত কারণে স্থানচ্যূত মানুষের সংখ্যা দ্রুত উর্ধগামী। ২০০৮ সালে ৬১,৩৪৭ থেকে বেড়ে ২০১২ সালে ৬,৫০,৭৮৮, তারপর ২০১৬ সালে ৬,১৩,৭১০ এবং ২০২০ সালে ৪৪,৪৩,০৮৮। এই হারে বাড়তে থাকলে সংখ্যাটি ২০৩০ সাল নাগাদ হবে ১৫৭,৬১৩,৯২০, তারপর ২০৪০ নাগাদ ৫,৫৯১,১৮৯,৬৫৪, এবং ২০৫০ নাগাদ ১৯৮,৩৪১,৬৩০,১৪০। দানের হিসাবের মতো ক্রমবর্ধমান এই সংখ্যাগুলি বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হার ৪২.৮৮% অনুযায়ী হিসেব করা, অবিশ্বাস্য হলেও যা একটি সরল পাটিগণিত। ভবিষ্যতের এই সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে ভাসান চরের মতো আশঙ্কাজনক এলাকাগুলির জন্য ভাবনা ভিত্তিহীন নয়।
 
গোড়ায় ভাসান চরের প্রসঙ্গ উত্থাপনের একটা বিশেষ কারণ আছে। সমস্যাসংকুল ভাসান চর এলাকায় পুনর্বাসিত হয়েছে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমারের রোহিঙ্গারা। রাজনৈতিক সংঘাতের শিকার এই মানুষগুলি প্রথমে ঢাকা, তারপর ভাসান চরে পুনর্বাসন পেয়েছে। উদ্বাস্তু সমস্যার প্রতি পূর্ণ সহানুভূতিশীল রাষ্ট্রও ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই সদিচ্ছা থাকলেও শেষ রক্ষা করা মুশকিল হয়ে ওঠে। আর উদ্বাস্তুরা কোণঠাসা হতে হতে পৌঁছে যায় এমন জায়গায়, যেখানে ডুবে যাওয়ার আশংকা পূর্ণমাত্রায়। সংঘাত (Conflict) থেকে ধাক্কা খেয়ে জলবায়ুর (Climate) মুখে পড়া, বাস্তুচ্যুতি, স্থানচ্যুতি এবং অবশেষে শরণার্থী হয়ে ওঠা, এটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই প্রান্তিক মানুষগুলির গতিপথ। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে বাঁচতে গিয়ে জলবায়ু জনিত অনিশ্চয়তার মুখে পড়া, কোনটা বড় সমস্যা? এই গোলকধাঁধা থেকে বেরোবার অন্তিম রাস্তা কি তবে আদৌ নেই?

এই ঘটনাগুলি আমাদের সামনে এক মস্ত প্রশ্ন চিহ্ন খাড়া করে দেয়। কী করছেন আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকরা? উন্নয়নশীল দেশের, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার এই সমস্যাকে কি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে তাবৎ বিশ্ব? না, এখনো পর্যন্ত জলবায়ু শরণার্থী বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নীতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সাম্প্রতিক কালে উদ্বাস্তু সমস্যা একটা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। সে হতে পারে ইউক্রেইন কিংবা সিরিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ইউরোপের যেকোনো দেশ। এছাড়া অর্থনৈতিক কারণে দেশান্তরে যাওয়া বহুপুরাতন পরিযান পদ্ধতি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যূত মানুষের কোনো সরকারি বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। এখনো পর্যন্ত উদ্বাস্তুর সংজ্ঞা ও প্রতিকারের যে রূপরেখা জারি আছে, তা মূলত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ দ্বারা মানবাধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরী করা, যার কেন্দ্রে রয়েছে মূলত স্থানীয় বা জাতীয় স্তরে সংঘর্ষের (conflict induced displacement) ভুক্তভোগী রাজনৈতিক উদ্বাস্তুরা। ১৯৫১ সালের বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে উদ্বাস্তু বিষয়ক সম্মেলনে নির্ধারিত সেই প্রাচীন সংজ্ঞা আজও বলবৎ আছে। তার পরিসরে সংঘর্ষ ছাড়া অন্যান্য কারণে বাস্তুচ্যুত আর স্থানচ্যুত, যেমন, জলবায়ু জনিত শরণার্থীদের এখনো অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি। United Nations Human Rights Commission (UNHCR)-এর রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, সারা পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ উদ্বাস্তু এবং উদ্বেগের হেতু মানুষদের (people of concern) প্রায় অর্ধেক বাস করে এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। অথচ এই অঞ্চলের এই বিশেষ সমস্যাটির ওপর নীতির আলো পড়েনি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ধীরগতি বাস্তুভূমির অবক্ষয় আর তার ফলস্বরূপ আভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি, আন্তঃসীমানা পরিযান, এসব সম্পর্কে বিবেচনা, নীতি নির্ধারণ অথবা ঘোষণা কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতিতে এখনো পর্যন্ত স্থান পায়নি। উন্নত দেশে এর প্রয়োজন কম, তাই গরজটা তাদের নয়। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও জলবায়ু-শরণার্থী নিয়ে কোনো নীতিগত উদ্যোগ নেই, এ কথা দুঃখজনক হলেও সত্য। ভাসান চর এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ, কিভাবে শরণার্থী সমস্যাকে আড়চোখে দেখে রাষ্ট্র, কেমন করে একটি জনগোষ্ঠীকে ঠেলে দেওয়া যায় জলবায়ু জনিত সমস্যার দিকে, কীভাবে জলবায়ু-শরণার্থী তৈরি করে শাসক-নীতি বা যথাযথ নীতির অভাব।

ভাসান চরের ডুবতে থাকা জনগোষ্ঠী, পুনর্বাসিত রোহিঙ্গা শরণার্থী, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের অভাবী মানুষ, সব দেশের সরকারেরই কৃপাবঞ্চিত প্রান্তিক জন কেবল পথ চলতে থাকবে অনির্দিষ্টভাবে, অধিকারহীন হয়ে, এই কি একবিংশ শতাব্দীতে উন্নয়নের গোড়ার কথা? এই সরল প্রশ্নটি পৃথিবীর নীতি নিয়ামকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করুক, নীতি প্রণয়নে পরিবর্তন আনুক, এটা শুধু কাম্য নয়, আশু প্রয়োজন। উন্নত দুনিয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় সহজে ঢুকতে পায় না উন্নয়নশীল দেশের দাবী। তাই সরব হোক দক্ষিণ এশিয়া, আওয়াজ উঠুক যথাযথ নীতির, জলবায়ু-শরণার্থীকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক মানবাধিকারের। সুস্থ পরিবেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা বাস্তুতান্ত্রিক মানবাধিকার (Ecological Human Right) ততটাই, যতটা তা এক অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানবাধিকার।