আরেক রকম ● দশম বর্ষ ত্রয়োদশ সংখ্যা ● ১-১৫ জুলাই, ২০২২ ● ১৬-৩১ আষাঢ়, ১৪২৯
প্রবন্ধ
৩০ বছর পরে
শেখর দাশ
জম্মুঃ ৫ নভেম্বর, ২০২০ - “নো জবস্ ফর ফোরটি ফাইভ, হাউ উইল দে রিহাবিলিট সিক্স লাখ?”
আস্ক প্রটেস্টিং কেপি-স্”; নিউস্ ক্লিক্; সাগরিকা কিসু।
২০১৪-র মে মাসে দিল্লির সিংহাসনে বসেছেন নরেন্দ্র মোদি। অর্থাৎ, উপরে উল্লেখিত নিউস্ ক্লিক্-এর হেডলাইনটি মোদির সিংহাসনে চড়বার ৬ বছর পর লেখা। সাগরিকা কিসুকে কেন ওই শিরোনাম লিখতে হল? কারণ, তখন, ‘২০ সালের নভেম্বরে প্রায় ৩৫ দিন ধরে কাশ্মীরের উদ্বাস্তু-কেপি অর্থাৎ কাশ্মীরি পণ্ডিতরা জম্মুতে অবস্থান-আন্দোলন চালাচ্ছেন। অবস্থানের অন্যতম দাবী ৪৫ জন পণ্ডিতের চাকুরি। শিরোনাম থেকেই জানতে পারছি, উদ্বাস্তু পণ্ডিতরা প্রশ্ন তুলেছেন, ৪৫ জনেরই যেখানে কাজ নেই সেখানে কীভাবে ৬ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব? ওই পণ্ডিতরা প্রশ্নটি তুলেছেন, কারণ নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ্ ওই সংখ্যক কাশ্মীরিকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কাশ্মীরের পণ্ডিতদের চাকরি-পুনর্বাসনের কাহিনি তাকরীবন বিশ পঁচিশ তিরিশ বছরের পুরনো। পুনর্বাসনের প্রয়োজন কেন হলো সে মামলা আমরা সবাই জানি। তবু প্রয়োজনে সেই ইতিহাস আমরা ছুঁয়ে যাব। এখন পুনর্বাসনের বিষয়ে আসি। ২০০৮-এ কংগ্রেসের মনমোহন সিংহ যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন কেন্দ্রীয় সরকার ৬,০০০ জন উদ্বাস্তু-পণ্ডিতকে চাকুরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই ছ’হাজারের মধ্যে তিন হাজারের দায়িত্ব ছিল রাজ্যর, তিন হাজারের দায়িত্ব কেন্দ্রর। ভুক্তভোগীদের মতে কেন্দ্র তার দায় পালন ক’রে ৩,০০০ চাকরি দিলেও, রাজ্য সরকার তার জিম্মেদারি পুরোপুরি পালন করেনি। ওই প্রতিশ্রুতির পর প্রায় ১৩ বছর কেটে গেছে। প্রতিশ্রুতি যখন দেওয়া হয়েছিল তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের ওমর আবদুল্লা। পরে, ১ মার্চ, ২০১৪ থেকে ১৯ জুন, ২০১৮ পর্যন্ত পিডিপি-বিজেপি জোট দু’দফায় জম্মু-কাশ্মীরে সরকার চালিয়েছে। কিন্তু ডাবল-ইঞ্জিন তত্ত্ব অনুসারে, কেন্দ্রে-রাজ্যে বিজেপি নিয়ন্ত্রিত সরকার থাকা সত্ত্বেও ওই বাকি ৩,০০০টি চাকুরির বিশেষ সুরাহা হয়নি।
৭ নভেম্বর, ২০১৫ নরেন্দ্র মোদি আবার নতুন ক’রে ৩,০০০ চাকুরি এবং ৬ লাখ মানুষের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রাইম মিনিস্টার’স ডেভেলপমেনট্ প্যাকেজ-এর মোড়কে। 'দি হিন্দু' প্রকাশিত একটি খবরে জানা যাচ্ছে, ২০২০-র মার্চ পর্যন্ত ওই কেন্দ্রীয় প্যাকেজে ২৫৪ জন কাজ পেয়েছেন। তারপর তো করোনা-অসুর শুধু ভারত নয় দুনিয়ার সব শাসকদেরই পৌষমাস নিয়ে এসেছে। প্রতিশ্রুতির ফানুস চুপসে যেতে তিতি-বিরক্ত, বিধ্বস্ত, অবসন্ন পণ্ডিতরা পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। বহু যোগ্য প্রার্থী চাকুরি পাচ্ছেন না। অনেকেরই বয়স পেরিয়ে যাবার সীমান্তে পৌঁছেছেন, অনেকরই পেরিয়ে গেছে। ওইরকমই বদকিসমত ৪৫ জন উদ্বাস্তু-পণ্ডিত অনেকের সাথে পথে নেমেছেন। তাঁদের মতো আরও কিছু মানুষ মোদি-শাহ্-বিজেপির সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান। ভরসা হারিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। যে প্রশ্ন দিয়ে এই লেখার শুরু।
গত তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে, ভোট-বাজারে কাশ্মীরি-পণ্ডিতরা আরএসএস-বিজেপি-র এক অতি নির্ভরযোগ্য তুরুপের তাস। কেন্দ্র রাজ্য প্রতিটি নির্বাচনেই এই বিষয়টি তারা দগ্দগে ক’রে তোলে। মুসলমানরা কতো খারাপ, হিন্দুস্তানে হিন্দু ধর্ম কতোটা ‘খতরেমে’ সেটা প্রমাণ করার প্রধান অস্ত্র ওই কাশ্মীরি-পণ্ডিত প্রসঙ্গ। ওরই ব্যবহারে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, বিদ্বেষের আগুন ছড়িয়ে ফায়দা লোটে। ১০/১৫ লাখ সেনার ঘেরাটোপে বাকি-ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন জম্মু-কাশ্মীরের আসল ছবি পর্যটকদের রঙিন লেন্সে কোনোদিনই ধরা পড়ে না। আর কাশ্মীরের নিজস্ব মিডিয়া তো আজ পুরোপুরি ধ্বংসের মুখোমুখি - তাই ভূ-স্বর্গের সত্যিকারের ছবি আমরা জানতে পারি না। ফলে সাধারণ মানুষ ধরেই নেন বিজেপি সত্যি কথা বলছে। আর কে একজন তো বহুযুগ আগেই প্রমাণ ক’রে দিয়ে গেছেন, একই মিথ্যে বারবার প্রচার ক’রে গেলে তা সত্যে পরিণত হয়। কাশ্মীরের পণ্ডিতরাও তাঁদের দুর্দশা-দুর্ভাগ্য নিয়ে আরএসএস-বিজেপিকে এতদিন খুব বেশি নিশানা করতেন না। তাঁরা ভাবতেন ওই গোষ্ঠী একদিন আবার ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু তাঁদের ধৈর্যের বাঁধেও এখন ফাটল ধরেছে। তাঁরাও আজ পথে নেমেছেন, চিৎকার ক’রে বলছেন অমিত শাহ্ লোকসভায় দাঁড়িয়ে তামাম ভারতকে বিভ্রান্ত করছেন! ব্যাপারটা সকলেরই জানা, তবু লেখার প্রয়োজনে আমরা প্রসঙ্গটিতে আরেকবার নজর দেব।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভারতের সংসদে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ্ জানিয়েছেন, বিজেপি সরকারের আমলে কাশ্মীরের পণ্ডিতরা বাস্তুচ্যুত হননি - কংগ্রেস সরকার তাঁদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এই তথ্যটির বিষয়ে কাশ্মীরের পণ্ডিতরা তীব্র আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের মতে, (এবং সেটাই সত্যি) বিশ্বনাথ প্রতাপ (ভি. পি.) সিংহ যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন পণ্ডিতরা কাশ্মীরের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। ভি. পি. সিংহ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপির সমর্থনে।
জনতা দল তথা ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেতা ভি. পি. সিংহকে প্রধানমন্ত্রী করতে ১৯৮৯-এর শেষে দিল্লিতে এক ‘অশুভ জোট’ তৈরি হয়েছিল। একহাতে বামপন্থী দলগুলো (সিপিআই(এম), সিপিআই ইত্যাদি) এবং আরেক হাতে চরম দক্ষিণপন্থী বিজেপিকে আঁকড়ে ধরে বিশ্বনাথ প্রতাপের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সেই ছবি এখনও অনেকের স্মৃতিতেই উজ্জ্বল। তখন (১৯৮৯-’৯০) জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি বেশ উত্তাল। অবস্থা সামাল দিতে, ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী হয়েই জানুয়ারিতে বিশ্বনাথ প্রতাপ জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নর ক’রে পাঠান অভিজ্ঞ এবং সকলেরই কাছের মানুষ জগমোহন মালহোত্রাকে। কঠোর হাতে সমস্যা মোকাবিলার ব্যাপারে তিনি সিদ্ধহস্ত। এই জগমোহন মালহোত্রাকে কাশ্মীরি-পণ্ডিতদের আলোচনায় একটা প্যারাগ্রাফ জায়গা না দিলে তাঁর প্রতি এবং ইতিহাসের প্রতি না-ইনসাফ করা হবে।
(১৯)’৭০-এর দশকে দিল্লি ডেভলপমেন্ট অথরিটির উপ-প্রধানের আসন অলঙ্কৃত করা থেকেই শুরু হয় জগমোহনের জয়যাত্রা। তখন থেকেই সঞ্জয় গান্ধির সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে, ইন্দিরা গান্ধিরও স্নেহভাজন হয়ে ওঠেন। এইসব যোগাযোগের কারণে না হলেও, ১৯৭১-এ তাঁর 'পদ্মশ্রী' প্রাপ্তি বেশ কানাঘুষোর সৃষ্টি করেছিল। তাতে অবশ্য গান্ধি-মালহোত্রা আঁতাত আরও জোরালো হয়ে ওঠার পথে কোনো বাধা তৈরি হয়নি। এবং ১৯৭৫-৭৭-এ, এমারজেন্সির ঋতুতে তিনি ইন্দিরা গান্ধীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেন। ওই সময়কালে দিল্লির সৌন্দর্যায়নে ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয়ের প্রধান সারথিও ছিলেন তিনি। ঘনিষ্ঠতা-সাফল্যর স্বীকৃতিতে ১৯৭৭-এ তাঁর টুপিতে যুক্ত হয় 'পদ্মভূষণ' পালক। ১৯৮২-তে দিল্লি-এশিয়াড অনেকেরই ধূসর স্মৃতিতে এখনও চিক্চিক করতে পারে। জগমোহন তখন নতুন দিল্লির লেফটেনেন্ট গভর্নরের বিশাল দায়িত্ব পান। ’৮৪-তে ইন্দিরা গান্ধি খুন হলেন, লোকসভার ভোটে বিপুল গরিষ্ঠতা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন রাজীব গান্ধী। ১৯৮৪ থেকে ’৮৯ জগমোহন পেলেন জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নরপদ। ওই সময়, বিশেষ ক’রে ’৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকেই কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বাকি-ভারতেও তখন নানারকম রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছিল। ‘লৌহমানবী’র পতন এবং ‘পাইলট’ রাজীবের প্রধানমন্ত্রিত্বে উত্থানের সাথে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত এক দুর্নীতির অভিযোগ (বোফোর্স) ওই টানাপোড়েনকে তীব্রতা দিয়েছিল। এল ১৯৮৯-এর লোকসভা ভোট। ভোটে রাজীব গান্ধী তাঁর একদা অর্থমন্ত্রী, কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর গড়া ন্যাশনাল ফ্রন্টের কাছে ক্ষমতা হারালেন। অবশ্য ন্যাশনাল ফ্রন্ট পেয়েছিল মাত্র ১৪৩টি আসন - কিন্তু বিশ্বনাথ প্রতাপকে দু’দিক থেকে দুটো ক্রাচ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিজেপি-র দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি এবং তখনকার ভারতীয় কম্যুনিস্ট আন্দোলনের অবিংসবাদী-ঈশ্বর জ্যোতি বসু। বহুচর্চিত এই কাহিনির আড়ালে যে খবরটা চাপা পড়ে যায়, তা হল, যা আমরা আগেই বলেছি, ১৯৯০-এ দ্বিতীয়বারের জন্য জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নর হলেন জগমোহন মালহোত্রা। এবং বিজেপি-র অনুমোদন ছাড়া তখন বিশ্বনাথ প্রতাপের ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। এখান থেকেই আমাদের মূল আলোচনায় চলে যাব। আমরা জানি ১৯৮৯/’৯০ থেকে কাশ্মীরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হতে থাকে। বাকি-ভারতের রাজনীতির আঁচে কাশ্মীরের পণ্ডিতদের কপাল পোড়ে। উগ্রপন্থীদের সহজ টার্গেটে পরিণত হন তাঁরা। ১৯৯০-এর জানুয়ারি থেকেই কাশ্মীর থেকে পালাতে শুরু করেন ওই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তখন জগমোহন মালহোত্রা সেখানকার গভর্নর। তাই ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ অমিত শাহ্ দুনিয়ার বৃহত্তম গণতন্ত্রের সংসদে দাঁড়িয়ে যখন পণ্ডিতদের সমস্ত দুর্দশার দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে চাপালেন, তখন ইতিহাসের দেবী একটু মুচকি হেসে ওঠেন। কারণ, এতদিন বিজেপি/আরএসএস-এর ওপর আস্থা রেখে চলা উদ্বাস্তু-পণ্ডিতরা এবার প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন। 'পান্নুন কাশ্মীর' নামের এক দক্ষিণপন্থী কাশ্মীরি সংগঠনের আহ্বায়ক ডঃ অগ্নিশেখর অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপি দেশকে বিভ্রান্ত করছে! অনেকেই বলে থাকেন, উদ্বাস্তু-পণ্ডিতদেরও অনেকে বলেন, সেই সময় কাশ্মীর থেকে জম্মুতে বা অন্যত্র পালিয়ে যেতে সন্ত্রস্ত অসহায় পণ্ডিতদের সরাসরি সহায়তা দিয়েছিল গভর্নর জগমোহনের প্রশাসন। গভর্নর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরিস্থিতি ঠিক হলে সবাইকে আবার ঘরে ফেরানো হবে। হয়নি। পণ্ডিতদের উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী যদি হয় কাশ্মীরের উগ্রপন্থীরা, তাহলে কৃতিত্বর ভাগীদার ভারতীয় জনতা পার্টির আশীর্বাদ ধন্য জগমোহন মালহোত্রা, কংগ্রেস নয়! এই রাজনীতিবিদ পরবর্তীকালে বিজেপি-র সর্বোচ্চ কর্তাদের খুবই ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছিলেন এবং অটলবিহারি বাজপেয়ী মন্ত্রীসভায় কেবিনেট মন্ত্রীও হয়েছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরের ৩৫এ এবং ৩৭০ ধারা বাতিলের উগ্র সমর্থক এই মানুষটিকে ২০১৬-তে নরেন্দ্র মোদি সরকার 'পদ্মবিভূষণ' উপাধিতে সম্মানিত করেন!
ফিরে আসি অমিত শাহ্র বক্তৃতায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সংসদীয় ভাষণের আরো কিছু ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধেও উদ্বাস্তু-পণ্ডিতরা তাঁদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। মন্ত্রীমশাই দাবী করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের রেজিস্টার্ড-উদ্বাস্তুদের ৪৪,০০০ পরিবারকে বিজেপি সরকার মাথাপিছু ৩,২৫০ টাকা (পরিবার পিছু সর্বোচ্চ ১৩,০০০ টাকা) ভাতা দিচ্ছে, কংগ্রেস ৭০ বছরে ওই কাজটি করতে পারেনি! পরিসংখ্যান বলছে, এই ভাতা ১৯৯০ থেকেই চালু, বিজেপি নতুন কিছু করেনি, তারা পরিমাণটা বাড়িয়েছে শুধু। আর পান্নুন কাশ্মীর-নেতা ডঃ অগ্নিশেখরের মতে বলেছেন ওই ৪৪,০০০ সংখ্যাটা পুরোপুরি ভুল। তাঁর মতে ত্রাণের সুবিধা পাচ্ছেন ২২ হাজার পরিবার। অনেকের মতেই সংখ্যাটা ১৯ হাজারের বেশি নয়, তাঁদের মধ্যে আবার অনেক ভুয়ো-প্রাপকও রয়েছেন! পণ্ডিতরা বলছেন, ২০১৪ সালে শ্রীনগরে ১৪.২ কেজি রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৫৬৭ টাকা, এখন ১,১০০ ছাড়িয়েছে। তাঁদের দাবী মাসিক ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫,০০০ টাকা করা হোক! বলাবাহুল্য এ ব্যাপারে সরকার নীরব।
পণ্ডিতরাও এখন উপলব্ধি করছেন, তাঁরা বিজেপি-আরএসএস-এর দাবার বোড়ে ছাড়া আর কিছুই নন। একসময় তাঁরা ৩৭০ ধারা বাতিল সমর্থন করেছিলেন। কাশ্মীর সমস্যার আসল কারণ ৩৭০ ধারা এই প্রচার আরএসএস গত প্রায় একশ’ বছর ধরেই ক’রে চলেছে। ৫ অগস্ট, ২০১৯ ওই ধারা কেন্দ্র সরকার বাতিল করেছে। এখন কাশ্মীরের পণ্ডিতরা বলছেন, ৪ অগস্টের তুলনায় তাঁদের অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। এখন উদ্বাস্তু-পণ্ডিতরাই দাবী তুলছেন, কাশ্মীরকে আবার ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তাঁরা বলছেন, পণ্ডিতদের যেটুকু সুরাহা হয়েছে ওই ৩৭০ ধারা থাকার সময়েই হয়েছে। কাশ্মীরি-পণ্ডিতদেরই আরেকটি সংগঠনের নেতা সতীশ মহলদার বলেছেন, “এর আগে কোনো রাজ্যের (এইভাবে) মর্যাদাহানি করা হয়নি। গণতন্ত্রে এরকম চলে না। কোনও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান মিলিটারি দিয়ে হয় না, এবং নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় না।” পণ্ডিতদের প্রশ্ন, ৮ বছর কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা সত্ত্বেও মোদি-শাহ্ কেন সমস্ত উদ্বাস্তু-পণ্ডিতদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়ে দিতে পারলেন না? এখনও কেন হাজার হাজার পরিবারকে অ-বাসযোগ্য কলোনিতে থাকতে হয়? প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৪,৫০০ কোটি টাকা খরচ ক’রে বিমান কিনতে পারছে ভারত সরকার, অথচ তাঁদের মাসিক ভাতার টাকা বাড়াতে পারছে না?
কাশ্মীরের পণ্ডিতরাই এখন বিজেপি সরকারকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছেন। পুনান কাশ্মীরের নেতা ক্ষুব্ধ ডঃ অগ্নীশ্বর বলেছেন, “ওরা (বিজেপি) আমাদের কী দিয়েছে? কিচ্ছু না! ওরা শুধু আমাদের নামটাকে রাজনীতিতে টেনে নামিয়েছে, আর ক্ষমতায় বসতে আমাদের নাম আর যন্ত্রণাকে ব্যবহার করেছে। এই কাশ্মীরি-পণ্ডিতরা তোমাদের ক্ষমতা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। এই আমাদের প্রতিজ্ঞা, এই সরকারকে আমার আর ক্ষমতায় বসতে দেব না।”
ইহুদি-বিদ্বেষে আমজনতাকে বিভ্রান্ত ক’রে জার্মানিতে ক্ষমতা দখল করেছিল হিটলার - মানুষ ভোট দিয়েই তাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। হিটলার বিশুদ্ধ-উচ্চবর্ণের থার্ড রাইখ গড়ে তুলবার খোয়াব দেখিয়েছিলেন। মোদি-শাহ্-আরএসএস খোয়াব দেখাচ্ছেন হিন্দুরাষ্ট্রর - মানুষ এখনও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু ইতিহাসের বিচার হাস্যকর - নির্মম!