আরেক রকম ● দশম বর্ষ একাদশ সংখ্যা ● ১-১৫ জুন, ২০২২ ● ১৭-৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

গম নিয়ে রাজনীতি

অশোক সরকার


ঘটনাটা এখনকার ওয়েব সিরিজের গল্পের মতই। প্রধানমন্ত্রী ৫৬ ইঞ্চি ছাতি প্রসারিত করে ঘোষণা করে দিলেন ভারত দুনিয়াকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নেবে। বিদেশমন্ত্রক, খাদ্য মন্ত্রক ও বাণিজ্য মন্ত্রকের আমলাদের কাছে খবর গেল বিদেশ সফরে যেতে হবে। তারা ব্যাগ ও ফাইল গোছানো শুরু করে দিল, কে যাবে, কে বাদ যাবে তাই নিয়ে টানাপড়েন। শেষ পর্যন্ত ঠিক হল ১৪ জনের বাণিজ্য ডেলিগেশন যাবে ৯টি দেশে। সেই মর্মে ঘোষণাও হয়ে গেল, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়ে গেল। টেলিভিশন অ্যাংকরেরা বড় গলায় দেশকে জানিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশকে খাওয়ানোর পরে এখন দুনিয়াকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। এর পর কিছু ফোন, কিছু লিখিত নোট, কিছু বাক্যালাপ, তারপর ডিগবাজি। যেদিন বাণিজ্য ডেলিগেশন রওনা দেবে ঘোষণা হল, তার ৪৮ ঘণ্টা পরে সরকার ঘোষণা করল, গম রপ্তানি বন্ধ!

এর পরে ওয়েব সিরিজের কাহিনী এগোবে চিরাচরিত পথে। সরকার ভেবছিল ১১১ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম উৎপাদন হবে। গমের ফলন বাজারে আসতে শুরু করতেই বোঝা গেল ফলন কম হতে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে হিসেবে করে সরকার বলল ৫.৭% মত উৎপাদন কমবে, মানে এবছর উৎপাদন হবে ১০৫-১০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন, তাপপ্রবাহের ফলে। তাপপ্রবাহ এখনো চলছে, এবং পাঞ্জাব-হরিয়ানায় এখনো পুরো ফসল ওঠেনি, তাই ফলন আরো কমে যাবার সম্ভাবনা আছে। অ-সরকারি হিসাব বলছে ফলন ১০০ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি হবে না. অর্থাৎ গমের উৎপাদন প্রায় ১১ মিলিয়ন টন কম হবে।

ওয়েব সিরিজের মতোই এবার বেরোবে আরেকটি প্লট - রাশিয়া উক্রেনের যুদ্ধ। ১৪ই ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ বেঁধেছে, এবং তখনি খাদ্যশস্যের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরা বুঝে গেছে, এই যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বাড়বে। কেন? কারণ গমের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক হলো রাশিয়া, বছরে ৪০ মিলিয়ন মেট্রিক টন রপ্তানি করে, উক্রেনও রপ্তানি করে ২০ মিলিয়ন টনের বেশি। সেই কারণেই মার্চ মাস থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম প্রায় ২৫% বেড়ে গেছে। তার প্রভাব এসে পড়েছে দেশের বাজারে। মধ্যপ্রদেশে এপ্রিল মাসে গম বাজারে আসতেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ২,০১৫ টাকার থেকে কুইন্টাল প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে বেশি পেতে শুরু করেছেন চাষিরা। বেশি দাম দিয়ে কিনছে কারা? মূলত রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলি। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট বেরিয়েছে যে ওয়্যারহাউসগুলি, বিশেষত বন্দর এলাকার ওয়্যারহাউসগুলিতে বেশি বেশি জায়গা কেনার ধুম পড়ে গেছে। সেই দেখে সরকারও তার গম কেনা দিয়েছে কমিয়ে। ৯ই মে ২০২২ তারিখের 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' কাগজে কৃষি বিশেষজ্ঞ হরিশ দামোদরন দেখাচ্ছেন, যেখানে প্রতি বছর সরকার গম কেনে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন মেট্রিক টন, সেখানে এবার কিনবে মাত্র ১৮-১৯ মিলিয়ন মেট্রিক টনের মতো, যা কিনা গত ১৫ বছরে সবচেয়ে কম। গত বছর গম রপ্তানি হয়েছিল ৭.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন, এবছর ভাবা হয়েছিল প্রায় ১১ মিলিয়ন মেট্রিক টন রপ্তানি করা যাবে। যেহেতু চাষীরা বেশি দাম পাচ্ছে তাই সরকারের বেশি বেশি করে কিনে মজুত করার কোনো দরকার নেই। সরকার তার দামও বাড়ায়নি, ফলে চাষিদের কাছে সরকারকে বিক্রি করার কোনো আগ্রহ ছিল না।

প্লটের মধ্যে সাব প্লট থাকে। পাঞ্জাবের চাষিরা কিন্তু খাপ্পা। কারণ মে মাসের প্রথম দুটি সপ্তাহে, সেখানে মান্ডিতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের চেয়ে মাত্র ২০-৩০ টাকা বেশি মিলছে। এদিকে মান্ডিতে এবার রেকর্ড বিক্রি হয়েছে, প্রায় ৬ লক্ষ টন, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ। কিন্তু তাপপ্রবাহের জন্য উৎপাদন হয়েছে কম, কাজেই খরচা উঠছে না। ৬ই মে, ২০২২ তারিখে 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' লিখছে কুইন্টাল প্রতি ২০২০ টাকায় ১০৯ কুইন্টাল গম বেচেছেন এক চাষি, প্রাইভেট ব্যবসায়ীকে। গত বছরের তুলনায় তিনি কুইন্টালে ৪৫ টাকা বেশি পেয়েছেন, তাও তার মুখ গোমড়া। ব্যবসায়ীরা বলছে, পাঞ্জাবে সরকারি লেভি ৩%, যেখানে রাজস্থানে ১.৬% আর মধ্যপ্রদেশে মাত্র ০.৫%। তথ্য সঠিক হলেও বাজারদর মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের তুলনায় এতটাই কম শুধু লেভির কারণে, তা মানতে নারাজ চাষিরা।

ভারতের রপ্তানী করা গম মূলত যায় বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, ইয়েমেন ইত্যাদি দেশে, এর মধ্যে বাংলাদেশ একাই ভারতের রপ্তানী করা গমের ৫৫% কেনে। এই প্রথমবার মিশর ভারতের থেকে গম কিনতে চেয়েছে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় কান্ডলা বন্দর থেকে, সেখানে ৪,০০০-এর বেশি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ বলছেন প্রায় ২০ লক্ষ টন গম বন্দরে আটকে আছে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়, বিদেশী সরকারের মুখপাত্রের মুখে এমনকি জি-৭ দেশগুলির ফোরামে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আমেরিকা ইতিমধ্যেই ভারতকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়েছে। জার্মানির স্টুটগার্টে জি-৭ কৃষি মন্ত্রীদের মুখেও একই কথা। ভারত তো গমের খুব একটা বড় রপ্তানিকারক নয়, ৫-৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাত্র রপ্তানি করে থাকে। তাহলে কেন এই চেঁচামেচি? ওয়েব সিরিজের পরের পর্ব তাই নিয়ে।

ভারতের রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম আরও বাড়তে শুরু করেছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই বাড়ছিল, কিন্তু ভারতের সিদ্ধান্ত আগুনে ঘি দেওয়ার মতো। শিকাগো হল গমের আন্তর্জাতিক ব্যবসার ফিউচার ট্রেডের পীঠস্থান, সেখানে গমের আন্তর্জাতিক মূল্য গত ছয় সপ্তাহে ২৫% বেড়েছে, ভারতের ঘোষণার পরে আরও ৬% বেড়ে গেছে। রাশিয়া উক্রেনের যুদ্ধের ফলে এমনিতেই বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশের অর্থনীতিতে জোর ধাক্কা পড়েছে, মূলত গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম-র দাম ও লভ্যতা নিয়ে। তার উপর এখন গমের দাম বাড়লে ইয়োরোপীয় সরকারগুলোর মুখ পুড়বে।

কিন্তু সত্যি কি মুখ পুড়বে? প্রথমত রাশিয়া-উক্রেনের গম এখনও বাজারে আসেনি। সেই ফলন উঠবে আগস্ট মাসে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে সেই ফলন রপ্তানি করতেই হবে, কারণ তাদের উৎপাদন তাদের দেশীয় ব্যবহারের চেয়ে দ্বিগুন। ইউরোপ, কানাডার ফলনও উঠবে একই সময়ে। কাজেই মূল রপ্তানিকারকদের উৎপাদন বাজারে আসেনি এবং তাদের রপ্তানি এখনো শুরুই হয়নি। আসল কথা হল, রাশিয়া, যারা ৪০ মিলিয়ন টন গম রপ্তানি করে - তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসার রাস্তাগুলি সব বন্ধ করা আছে। তাদের রপ্তানি আন্তর্জাতিক বাজারে আসতে গেলে পশ্চিমের তরফ থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার করতে হবে। সুইফ্ট ব্যবস্থা আবার চালু করতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংকে রাশিয়ার অ্যাকাউন্টগুলি আবার সচল করতে হবে। যদি যুদ্ধ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে রাশিয়া চাইলেও এই সব নিষেধাজ্ঞার জোরে তাদের গম আন্তর্জাতিক বাজারে আসবে না, তাতে প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হবে মিশর, বাংলদেশ, তুরস্ক, নাইজেরিয়া ও অন্যান্য-রা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকা সেই দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনও তাদের ২০ মিলিয়ন টনের কতটা এবার রপ্তানি করতে পারবে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এই পরিস্থিতিতে যেসব দেশ গম আমদানি করে - বাংলাদেশ, মিশর, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, সুদান, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি প্রায় ৩০টি দেশ পড়বে বিপদে। তখন আঙ্গুল উঠবে পশ্চিমী দেশগুলির উপর। তাই তারা চাইছে, ভারত থেকে আরও অনেক বেশি রপ্তানি হোক, যাতে সেই সম্ভাবনা কমে।

ইতিমধ্যে সরকারি ডিগবাজি-র পর থেকে সারা দেশেই মান্ডিগুলিতে গমের দাম ১৫০-১৭০ টাকা কমে এসেছে। গত তিন দিন ধরে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের মান্ডিতে গমের দাম কুইন্টাল প্রতি ২,০৩০ টাকা থেকে ২,০৫০ টাকা হয়ে গেছে। মাত্র দুটি কি তিনটি মান্ডিতে দাম ২,১০০ টাকা ছুঁয়েছে। মধ্যপ্রদেশেও তাই। যেহেতু উৎপাদন প্রায় ১০% কম হয়েছে, তাই চাষিদের দাবি সরকার হয় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়াক, নয়ত বোনাস দিক। বোনাস দেবার প্রথা নতুন নয়। সরকার বহুবার এই ধরণের পরিস্থিতিতে চাষিদের বোনাস দিয়েছে। কাজেই এই দাবি ওঠাই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে বড় চাষিদের একটা অংশ যারা রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে কিছুটা যুক্ত, তাঁরা দাবি করছেন রপ্তানি বন্ধ করে সরকার চাষিদের বেশি রোজগার পাওয়ার রাস্তা থেকে বঞ্চিত করছেন। এঁদের প্রতিনিধি অনিল গ্যাংওয়াত 'দি প্রিন্ট' পত্রিকায় চ্যাঁচাছোলা ভাষায় সরকারকে আক্রমণ করে লিখেছেন, সরকার মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে রক্ষা করতে গিয়ে চাষিকে ঠকাচ্ছে। এই অনিল গ্যাংওয়াত মহারাষ্ট্রের শ্বেতকারী সংগঠনের নেতা, কিষান আন্দোলনের সময় প্রধান বিচারপতি বোবড়ে-র হাতে যে কমিটি তৈরী হয়েছিল তার সদস্য ছিলেন, কিষান আন্দোলনের বিপক্ষে সরব ছিলেন এবং তিনটি কৃষি আইনকে 'যুগান্তকারী' বলে সওয়াল করেছিলেন, এমনকি সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়া সেই রিপোর্ট তিনি মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে কিষান আন্দোলনের সমর্থক, পরামর্শদাতা কৃষি বিশেষজ্ঞ দেবেন্দ্র শর্মা সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর কথা হচ্ছে, ভারতে গম যতটা উৎপাদন হয়, প্রায় ততটাই ব্যবহার হয়, রপ্তানির জন্য খুব বেশি বাঁচে না, ৫-৬ মিলিয়ন মেট্রিক টনই রপ্তানি করা যায়, সারা পৃথিবীর গমের আন্তর্জাতিক রপ্তানির এটা মাত্র ২-৩%। তথ্যও সেকথাই বলে।

ওয়েব সিরিজে ফ্ল্যাশব্যাক থাকে। এ কাহিনীতেও আছে। ২০০৫-২০০৬ সালে ভারত একই রকমের সংকটের মধ্যে পড়েছিল। তার আগের কয়েক বছর এক টানা উৎপাদন ও সরকারি ক্রয় বেড়ে গিয়েছিল এবং সরকারি গুদামে এতটাই শস্য জমে যাচ্ছিল, যে সরকার ২০০২ সাল থেকে একটানা চার বছর গম রপ্তানি করতে প্রাইভেট কোম্পানিগুলিকে উৎসাহ দেয়, এবং সেই সঙ্গে সরকারি ক্রয় কমিয়ে দেয়। চার বছরে মোট ১২ মিলিয়ন টন গম রপ্তানি হয়েছিল, আর অন্যদিকে সরকারি মজুত ৩২ মিলিয়ন টন থেকে ৭ মিলিয়ন টনে কমে এসেছিল। ২০০৫-২০০৬ সালে গিয়ে উৎপাদনে ভাঁটা পড়ে এবং যেহেতু সরকারি স্টক থেকে আগের কয়েক বছর রপ্তানি হয়েছিল, ফলে রেশন ব্যবস্থার জন্য মজুত শস্যেও ভাঁটা পড়েছিল। অথচ প্রাইভেট কোম্পানিগুলির কাছে অনেক গম মজুত ছিল, যার উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সরকার প্রাইভেট কোম্পানিগুলির কাছে তাদের মজুত স্টক কত তা জানতে চায়। প্রাইভেট কোম্পানিগুলি মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল। ফলে শেষ পর্যন্ত সরকারকে সাত মিলিয়ন টন গম আমদানি করতে হয়, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ৫০% বেশি দামে। অথচ সেই বর্ধিত দাম দেশের চাষি পেতে পারত, যদি সময়মত সরকার চাষির কাছ থেকেই গম কিনত।

এবারে দেরিতে হলেও সরকার হয়ত সেই বিপদের গন্ধ পেয়েছে যে, উৎপাদন কমে গেলে আর একটানা রপ্তানি হতে থাকলে ভাঁড়ারে টান পড়ে যেতে পারে। এমনিতেই পেট্রল ডিজেলের ক্রমবর্ধমান দামের দৌলতে খাদ্যশস্যের দাম ঊর্ধ্বগামী, তার উপর গমের ভাঁড়ারে টান পড়লে, সামাজিক অসন্তোষ বাড়বে। কিষান আন্দোলন আবার জেগে উঠতে পারে। এই সন্দেহ কি সত্যি? নিচের তথ্য কি বলে?

প্রতি বছর এপ্রিলে ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন গম মজুত থাকে। গত দশ বছরের হিসেব তাই বলছে। আর প্রতি বছর সরকার আরও ২০-৩০ মিলিয়ন টন গম বাজার থেকে কেনে। গত চার বছর ধরে, প্রতি বছর ৩৫-৪০ মিলিয়ন টন করে সরকারি ক্রয় হয়েছে। গত দু'বছর হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সেটা স্বাভাবিক। এ বছর শুরুতে ১৯ মিলিয়ন টন মজুত ছিল আর সরকারি ক্রয়ের লক্ষ মাত্রা ধার্য হয়েছে আরও ১৯ মিলিয়ন টন। এই পরিমাণ কি রেশন ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত? গত দু'বছরের হিসেবে যথেষ্ট নয়, কারণ ৩৮ থেকে ৪০ মিলিয়ন টন করে গত দু'বছরে দরকার পড়েছে। স্বাভাবিক বছরগুলোতে ২৫ থেকে ২৭ মিলিয়ন টন পর্যন্ত দরকার পড়ে। ২০২২-২০২৩ স্বাভাবিক বছর নয়, কাজেই আরও বেশি গমের দরকার পড়বে। কাজেই এখনকার হিসেব অনুযায়ী সরকারের হাতে পর্যাপ্ত মজুত নেই। প্রশ্ন হচ্ছে আমদানি করতে গেলে পাওয়া যাবে কি? গেলেও সরকারকে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে, কিন্তু রাশিয়ার গম যদি আন্তর্জাতিক বাজারে উপলব্ধ না হয়, তাহলে অনেক বেশি দাম দিয়েও হয়ত পাওয়া যাবে না। সামাজিক অসন্তোষের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে ওয়েব সিরিজ এখন চলবে। এখন সবে প্রথম সিজন।

 

সূত্রঃ
1. https://www.cnbctv18.com/agriculture/indias-wheat-export-ban-will-hit-these-countries-the-most-13497762.htm

2. https://www.ig.com/en/news-and-trade-ideas/wheat-price-rises-6--as-ukraine-war-rages-and-india-restricts-ex-220516

3. https://www.aljazeera.com/news/2022/2/17/infographic-russia-ukraine-and-the-global-wheat-supply-interactive - এই ইনফগ্রাফিকে রাশিয়া কোন কোন দেশে মূলত গম রপ্তানি করে তা দেখানো হচ্ছে।

4. Anil Ghanwat, The Print, 16 May, 2022, “Ban on wheat export is tyranny. It stops farmers from getting a windfall from higher prices”.

5. Ramesh Chand, EPW, 12 May, 2007, “Wheat Supply, Price Prospects and Food Security”.